বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বিশ্ব আফগানিস্তানকে ভুলে গেছে’

  •    
  • ২৪ জুন, ২০২২ ০২:২১

সকাল থেকে ক্লিনিকে আসা ৫০০ রোগীর মধ্যে ২০০ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন পূর্ব আফগানিস্তানের গিয়ান শহরের একটি ক্লিনিকের স্টাফ মুহাম্মদ গুল।

ক্লিনিকটিতে মাত্র পাঁচটি শয্যা আছে। তবে মঙ্গলবারের ভূমিকম্পের ফলে এই সামান্য সরঞ্জাম দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ক্লিনিকের স্টাফ মুহাম্মদ গুল বিবিসিকে বলেন, ‘ক্লিনিকের সব কক্ষ ধ্বংস হয়ে গেছে।

‘একটি হেলিকপ্টার পাকতিকা প্রদেশের প্রত্যন্ত জেলা থেকে মুষ্টিমেয় কিছু রোগীকে চিকিৎসার জন্য শহরে নিয়ে গেছে। দুজন ডাক্তার একটি অস্থায়ী আউটডোর ক্লিনিক পরিচালনা করছেন এমন লোকদের জন্য, যাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’

ক্লিনিকটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের একমাত্র মাধ্যম জেনারেটর। তাও জ্বালানির সংকটে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অন্য প্রদেশ থেকে সাহায্য আসার প্রতিশ্রুতি থাকলেও, তা এখনও পৌঁছায়নি।

পাকতিকা প্রদেশে ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্পে অনেক বাড়িঘর ধসে পড়েছে। এরই মধ্যে মৃত হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি। চাপা আছেন অনেকেই।

বাড়ছে হতাহত

বিবিসিকে গুল বলেন, ‘এমন অন্তত ৪০-৫০ জন আছেন, যাদের অবিলম্বে চিকিৎসাসহায়তা প্রয়োজন। মনে হয় না তারা রাত পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন।’

ভূমিকম্পটি দরিদ্র পাহাড়ি অঞ্চলে আঘাত করেছিল, যেখানকার ভবনগুলো ভীষণ দুর্বল। কম্পনে ঘরবাড়িগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; অনেক জায়গায় ভূমিধসও হয়েছে।

গিয়ান শহরটি ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি। এখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও আটকে আছেন বহু মানুষ।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো কয়েক বছর আগে সেখানে ক্লিনিক স্থাপন করে। তবে সেগুলো ছোটখাটো স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য। এগুলোতে কোনো জরুরি বিভাগ ছিল না।

গত আগস্টে কট্টরপন্থি তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে অনেক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা দেশ ছেড়েছে। এতে তীব্র চিকিৎসা-সংকটে ভুগছে আফগানিস্তান।

তালেবানের ভারপ্রাপ্ত জেলা গভর্নর মঙ্গলবার গিয়ান সফর করেন। তাকে দেখে স্থানীয়রা ক্ষেপে উঠেছিলেন। পার্শ্ববর্তী একটি জেলার একজন স্বেচ্ছাসেবক বিবিসিকে এসব জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘তালেবানরা এই বিপর্যয় মোকাবিলা করতে সক্ষম না । সেখানে কোনো ব্যবস্থা নেই।

‘আমরা আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য আশাবাদী হতে পারি না। বিশ্ব আফগানিস্তানকে ভুলে গেছে।’

তালেবান দখলের আগেও দেশটির বৃহত্তর শহরগুলোতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাড়া দেয়ার ক্ষমতা সীমিত ছিল জরুরি পরিষেবাগুলোর। সেখানে কয়েকটি বিমান এবং হেলিকপ্টার পাওয়া যায়।

পাকতিকার চিকিৎসা কর্তৃপক্ষের মতে, এই অঞ্চলে ব্যথানাশক ও অ্যান্টিবায়োটিকের তীব্র ঘাটতি রয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাকতিকা প্রদেশের চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘তাদের অঞ্চলে ব্যথানাশক ও অ্যান্টিবায়োটিকের তীব্র ঘাটতি রয়েছে।’

পাকতিকার একটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, একজন অল্পবয়সী বাবা বুকে ব্যথা নিয়ে কাঁদছেন। তিনি তার পরিবার ও ছোট সন্তানদের বলছেন, ‘তারা (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) যদি আমাকে না চিকিৎসা দিতে পারে, তবে যেন মেরে ফেলে।’

চিকিৎসকরা বলছেন, বেশির ভাগ রোগীই পুরুষ। কারণ নারী ও শিশুদের ধ্বংসাবশেষ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারেনি। কিছু শিশু তাদের পিতামাতা ছাড়াই ক্লিনিকে ছিল। যার মধ্যে আট বছরের একজনের অবস্থা গুরুতর।

একজন চিকিৎসক বলেন, ‘ছেলেটি লোকজনের কাছে তার বাবা-মা ও বোনকে বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছে। তারা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে।

‘তারপর সে শুনতে পেল একজন আমাকে বলছে, তারা সবাই মারা গেছে। সে তখন চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায়।’

বিভিন্ন এলাকায় অনেক মরদেহ মাটিতে পড়ে আছে বলে জানা গেছে। সেখানে কোনো সরকারি সাহায্যকর্মী উপস্থিত নেই। তাই প্রতিবেশী এলাকা থেকে লোকজন উদ্ধার অভিযানে সাহায্য করতে আসছেন।

পাশের শহর উরগুন থেকে একজন স্বেচ্ছাসেবী ধ্বংসস্তূপ থেকে আটকে পড়াদের বের করতে সাহায্য করছিলেন।

তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে ৪০টি মরদেহ পেয়েছি, বেশির ভাগই ছোট বাচ্চাদের।’

যারা জীবিত উদ্ধার হয়েছেন তাদের অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। একজন চিকিৎসক বলেন, ‘ক্ষত ধোয়ার জন্য পরিষ্কার পানি নেই। মনে হচ্ছে শিগগিরই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে।’

এ বিভাগের আরো খবর