মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেতা অং সান সু চিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর নেপিদোর একটি কারাগারে তাকে রাখা হয়েছে। এতদিন গৃহবন্দি ছিলেন সু চি।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী তার নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে। সে সময় গ্রেপ্তার হন শান্তিতে নোবেল জয়ী ৭৭ বছরের সু চি। এক বছর ধরে তাকে রাজধানীর অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছিল।
সু চির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কয়েকটি মামলা করে জান্তা সরকার। এসবের কয়েকটিতে ইতোমধ্যে ১১ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন তিনি। যদিও সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সু চি। বলেছেন, এসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এর আগেও গৃহবন্দিত্ব কাটিয়েছেন সু চি। দেশটির সামরিক শাসকরা তাকে ১৫ বছর বন্দি রেখেছিল। এ সময়ে সু চি হয়ে ওঠেন গণতন্ত্রের আইকন। তবে জেল-হাজতে পাঠানোর ঘটনা এটাই প্রথম।
ধারণা করা হচ্ছে, জনপ্রিয় এই নেতা কারাগারের ভেতরে স্থাপিত একটি বিশেষ আদালত থেকে বিচারের শুনানিতে অংশ নেবেন।
আদালতের বরাতে বিবিসি বার্মিজ বলছে, সু চিকে বুধবার কারাগারের ভেতর বিশেষভাবে নির্মিত আবাসনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তার সহকর্মী ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট একই রকম নির্জন কারাবাসে আছেন।
সূত্র আরও জানিয়েছে, নতুন জায়গায় ভালো আছেন সু চি। তার দেখভালে তিনজন নারী কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সামরিক সরকারের সংক্ষিপ্ত বিবৃতি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা হয়, মিয়ানমারের ফৌজদারি আইন অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ‘গোপন বিচারকে’ প্রতারণা বলে নিন্দা জানিয়েছে। কারণ শুনানিতে জনসাধারণ এবং সংবাদকর্মীদের উপস্থিত থাকতে দেয়া হয় না। কেবল তা-ই নয়, সু চির আইনজীবীদের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলাও নিষেধ।
বিবিসির জোনাথন হেড বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে উধাও হয়ে যাওয়া সু চি কতদিন নির্জন কারাবাসে থাকবেন তা স্পষ্ট নয়। যদিও তার গৃহবন্দিত্বের অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি। তবে তার সঙ্গে বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিল বলে জানা গেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, সু চির গৃহকর্মী এবং তার কুকুর তাকে কারাগারে রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি।
উসকানি, দুর্নীতি, কোভিড নিয়ম লঙ্ঘন এবং টেলিযোগাযোগ আইন ভঙ্গের অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হয়েছেন সু চি। আরও কয়েকটি মামলার বিচার এখনও শুরু হয়নি। সব অভিযোগ প্রমাণ হলে, ১৯০ বছরের বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ড পেতে পারেন সু চি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেন, ‘আমরা যা দেখছি তা হলো, মিয়ানমারের জান্তা অং সান সুচির প্রতি আরও বেশি কঠোর হচ্ছে।
‘জান্তা সরকার স্পষ্টতই তাকে এবং তার সমর্থকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।’
সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সাধারণ নির্বাচনে বড় জয় পেলেও, কয়েক মাসের মধ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে অভ্যুত্থান ঘটে।
সামরিক বাহিনী সু চির বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। যদিও স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলেছিলেন অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। সে সময় সু চির সঙ্গে গ্রেপ্তার হন তার কমপক্ষে ১৪ হাজার নেতা-কর্মী, ভক্ত।
অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (বার্মা) বলছে, ‘ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন অভিযানে অন্তত দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।