ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। ফলে রাশিয়াকে একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হচ্ছে। ইউরোপের রুশ জ্বালানিনির্ভরতাকে কেন্দ্র করে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করছে রাশিয়াও।
এবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসছে শীতে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে রাশিয়া, এমন আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে ইউরোপকে সতর্ক করেছেন ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির প্রধান ফাতিহ বিরল।
তিনি বলেছেন, যদিও সম্পূর্ণ সরবরাহ বন্ধ হয়তো হবে না, তবে এমন পরিস্থিতি চিন্তা করে ইউরোপকে জরুরি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।
বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউরোপের কয়েকটি দেশ জানিয়েছে, তারা প্রত্যাশার তুলনায় বেশ কম রুশ গ্যাস পাচ্ছে।
যদিও রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, কম গ্যাস সরবরাহ ইচ্ছাকৃত নয়। এ জন্য প্রযুক্তিগত সমস্যা দায়ী।
রুশ এই ব্যাখ্যায় একমত নন ফাতিহ বিরল। তিনি বলছেন, গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া রাশিয়ার ‘কৌশলগত কারণে’। রাশিয়া মূলত গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার বিভিন্ন অজুহাত খুঁজে বেড়াচ্ছে এবং সম্ভবত পুরোপুরি বন্ধও করে দেবে।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের আগে ইউরোপ তার প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪০ শতাংশ আমদানি করত রাশিয়া থেকে। বর্তমানে তা ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
ইউরোপজুড়ে গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার ইতালীয় এনার্জি ফার্ম এনি বলছে যে, রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গ্যাজপ্রম থেকে যে গ্যাস তারা আশা করেছিল তার মাত্র অর্ধেক পেয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ার খবর জানিয়েছে স্লোভাকিয়া ও অস্ট্রিয়া।
ফ্রান্স বলেছে, ১৫ জুন থেকে জার্মানি হয়ে কোনো রুশ গ্যাস তারা পায়নি।
এদিকে পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস রুশ মুদ্রা রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে অস্বীকার করায় সেসব দেশে গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করে দিয়েছে রাশিয়া।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বন্ধু নয় এমন দেশকে রুশ মুদ্রা রুবলেই গ্যাস কিনতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির প্রধান ফাতেহ বিরল মনে করেন, চলমান গ্যাস সংকটে চাহিদা কমাতে জরুরি স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপকে ন্যায্যতা দিয়েছে, যেমন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহার বাড়ানো এবং সম্ভব হলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সময়সীমা দীর্ঘায়িত করা।
যদি রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, তবে কঠোর ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে এবং ইউরোপে পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খলভাবে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে রেশনিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে। এমনটাই মনে করেন ফাতিহ বিরল।
এদিকে রুশ গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে নেদারল্যান্ডসের জলবায়ু ও জ্বালানিমন্ত্রী রব জেটেন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ওপর সব বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত ক্ষতি বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছিল। ইউরোপের দেশগুলো এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছে শুরু থেকেই।
এক অর্থে জার্মানির পর নেদারল্যান্ডসও বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিল।
এর আগে একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পর জার্মান অর্থমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক বলেছেন যে বার্লিনকে রুশ গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে।