ভারতে ১৮ জুলাই অনুষ্ঠেয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী করা হয়েছে সাঁওতাল রাজনীতিক দ্রৌপদী মুর্মুকে।
ওড়িশার ৬৪ বছর বয়সী সাবেক এ শিক্ষক বিজেপির সঙ্গে যুক্ত কয়েক দশক ধরে। দায়িত্ব পালন করেছেন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গভর্নর হিসেবেও।
নির্বাচিত হলে দ্রৌপদী হবেন ভারতের সর্বোচ্চ পদে আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রথম ব্যক্তি।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। যদিও এ পদে থাকা ব্যক্তি নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করেন না।
দেশটিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা ও নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্য, বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর বিধানসভার সদস্যদের ভোটে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ভোট রয়েছে বিজেপি মনোনীত প্রার্থীর।
নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তার বিশ্বাস দ্রৌপদী হবেন ‘মহান রাষ্ট্রপতি’।
গত মঙ্গলবার বিজেপির পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভা শেষে দলের সভাপতি জে পি নদ্দা প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বিজেপি ও মিত্রদের বাছাইকৃত ২০টি নাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে দ্রৌপদীকে প্রার্থী ঠিক করা হয়।
একনজরে দ্রৌপদী মুর্মু
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে আলোচনায় আসেন দ্রৌপদী। সে সময় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তার নামও রয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠে। দ্রৌপদী তখন ঝাড়খণ্ডের গভর্নরের দায়িত্বে।
ওড়িশার ময়ূরভাঁজ জেলার বায়দাপোসি গ্রামে ১৯৫৮ সালের ২০ জুন জন্ম দ্রৌপদীর। গ্রাম পঞ্চায়েতপ্রধানের এ মেয়ে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে পড়াশোনা করেন রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরের রমাদেবী উইমেন’স কলেজে।
ওড়িশা সরকারের করণিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন দ্রৌপদী মুর্মু। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ মেয়াদে তিনি রাজ্যের সেচ ও জ্বালানি বিভাগে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ওড়িশার রায়রংপুরের অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে শিক্ষকতা করেন এ রাজনীতিক। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। সে বছর রায়রংপুরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি।
রায়রংপুর আসনে ২০০০ ও ২০০৯ সালে বিজেপির পক্ষে দাঁড়িয়ে ওড়িশা বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন দ্রৌপদী।
২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিজু জনতা দল ও বিজেপির জোট সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাঁওতাল এ রাজনীতিক। শুরুতে বাণিজ্য ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিলেও পরবর্তী সময়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয় তাকে।
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তফসিলি সম্প্রদায়ের বিজেপির রাজ্য শাখার সভাপতি ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। ২০১৫ সালে ওড়িশার পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দেন তিনি।
ওড়িশার প্রথম আদিবাসী হিসেবে গভর্নর নিযুক্ত হন দ্রৌপদী। ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত সে পদে ছিলেন তিনি।
ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচিতে কর্মরত বিবিসি হিন্দির রিপোর্টার রবি প্রকাশের মতে, রাজ্যের গভর্নর হিসেবে ব্যাপক সুনাম কুড়ান দ্রৌপদী। তার সময়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল গভর্নরের কার্যালয়।