ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। পাল্টা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে ইউক্রেনীয় সেনারাও। পশ্চিমা দেশগুলো সেনা না পাঠালেও ইউক্রেনীয় সেনাদের সমরাস্ত্র সরবরাহ করছে। লড়াইয়ের প্রায় ৪ মাস হয়ে গেলেও যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, এই যুদ্ধে বছরের পর বছর ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত থাকতে হবে পশ্চিমাদের।
স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘যুদ্ধের খরচ অনেক বেশি, কিন্তু মস্কোকে তার সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে দেয়ার মূল্য আরও বেশি।’
জার্মান সংবাদপত্র বিল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ন্যাটোপ্রধান বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে যে এর জন্য (রাশিয়াকে পরাজিত করতে) কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। আমাদের ইউক্রেনকে সমর্থন করা ছেড়ে দেয়া উচিত নয়।’
স্টলটেনবার্গের মতে, জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এবং সামরিক সহায়তার জন্য খরচ অনেক বেশি। তার পরও ইউক্রেনকে আরও আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করা পূর্ব দোনবাস অঞ্চল মুক্ত করার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে। যার বেশির ভাগই বর্তমানে রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে।
কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
ন্যাটোপ্রধানের সুরেই দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও।
সানডে টাইমসের এক নিবন্ধে দীর্ঘ যুদ্ধের আশঙ্কা ব্যক্ত করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনকে পিষে ফেলার চেষ্টা করছেন। কিয়েভকে অস্ত্র, সরঞ্জাম, গোলাবারুদ এবং প্রশিক্ষণ সরবরাহ করা দরকার।
যুদ্ধের খরচ অনেক বেশি, কিন্তু মস্কোকে তার সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে দেয়ার মূল্য আরও বেশি।
মূলত ন্যাটো মহাসচিব স্টলটেনবার্গ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মনে করেন, ইউক্রেনে আরও অস্ত্র পাঠালে দেশটির জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর নবনিযুক্ত প্রধান স্যার প্যাট্রিক স্যান্ডার্সও বলেছেন, যুক্তরাজ্য ও মিত্রদের রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ জয়ে সক্ষম হওয়া দরকার।
বিবিসিকে দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান আমাদের মূল উদ্দেশ্যকে পরিষ্কার করে, যুক্তরাজ্যকে রক্ষা করা, স্থলে লড়াই ও যুদ্ধ জয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং শক্তি বৃদ্ধি করা, বাহিনীকে হুমকি দিয়ে রুশ আক্রমণ ঠেকানোর প্রয়োজনীয়তা।
স্যার প্যাট্রিক স্যান্ডার্স গত সপ্তাহে সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এদিকে পূর্ব ইউক্রেনে লড়তে সমরাস্ত্র ঘাটতিতে থাকা ইউক্রেনকে আরও ১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
নতুন এই অস্ত্র সহায়তার প্যাকেজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি।
যদিও কিয়েভের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগের প্রতিশ্রুত পশ্চিমা অস্ত্রের ১০ শতাংশও এখনও হাতে পায়নি ইউক্রেনীয় সেনারা।
আমাদের অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে যে এর জন্য (রাশিয়াকে পরাজিত করতে) কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। আমাদের ইউক্রেনকে সমর্থন করা ছেড়ে দেয়া উচিত নয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
দোনবাসের বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের খাদ্যসংকট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।