আফগানিস্তানের কাবুলে শিখ মন্দিরে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সহযোগী সংগঠন- আইএস খোরাসান। শনিবারের হামলায় নিহত হন দুইজন, আহত হয়েছেন সাত ব্যক্তি।
সংগঠনটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানায়, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সদস্যরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অপমান করেছে। তার প্রতিশোধ হিসেবে শিখ মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে।
ভারতে গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন বিতর্কে ইসলামের নবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা। পরে সে মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন দলের এক সদস্য।
- আরও পড়ুন: কে এই নূপুর শর্মা
সাত বন্দুকধারী শনিবার ভোরে মন্দিরে হামলার চেষ্টা করে। কাবুল পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষের পর সবাই নিহত হয়েছেন।
আইএসআইএস-কে তার টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছে, তাদের আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আবু মুহাম্মদ আল-তাজিক মন্দিরের প্রবেশপথে নিরাপত্তারক্ষীর দিকে একটি হাতবোমা নিক্ষেপ করলে তাকে হত্যা করা হয়।
‘একটি রাইফেল, পিস্তল এবং হাতবোমা নিয়ে তিনি (হামলাকারী) গুলি চালাতে চালাতে এগিয়ে যান। এ সময় উপাসকরা মন্দিরের ভেতর ছিলেন।’
মন্দির কর্তৃপক্ষ বলছে, হামলার সময় মন্দিরের ভেতর ৩০ জন ছিলেন।
আইএসআইএস-কে আরও দাবি করেছে, ওই সময় তাদের তালেবান সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। একটি গাড়িবোমা ও চারটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহার হয় লড়াইয়ে।
‘আইএসআইএস-কে এবং তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। সংঘর্ষে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আল-তাজিক মারা গেছেন।’
আফগানিস্তানের ইসলামিক এমিরেট- (আইইএ) কাবুলের হিন্দু উপাসনালয়ে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ টুইটে শিখ মন্দিরের কথা উল্লেখ করে দোষীদের কঠিন সাজার ঘোষণা দিয়েছেন।
বাড়ছে ক্ষোভ
আফগানিস্তানে একসময় হাজার হাজার শিখ এবং হিন্দুদের নিরাপদ আবাসস্থল ছিল। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নিলে ২০২১ সালের আগস্টে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। সেই থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে।
কাবুলে গত বছর শিখ সম্প্রদায়ের ওপর একটি বড় হামলা হয়েছিল। শিখদের দুটি মন্দিরে চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ২৪ জন। এর দায় নিয়েছিল আইএস।
বিজেপির বরখাস্ত মুখপাত্র নূপুর শর্মা। ছবি: সংগৃহীত
শনিবারের হামলাটি বিজেপি সদস্যদের মন্তব্যের জেরে ভারতের প্রতি মুসলিম বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মধ্যে হলো। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান এবং ইরাকের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক পতন ঠেকাতে এখন লড়াই করছে দিল্লি।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন (ইউএনএএমএ) সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানিয়েছে। টুইটে সংস্থাটি বলেছে, ‘শিখ, হাজারা এবং সুফিসহ আফগানিস্তানের সব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
আফগানিস্তানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতও এই হামলার নিন্দা করেছেন। বলেছেন, ‘ধর্মীয় এবং জাতিগত বহুত্ববাদকে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে রক্ষা করতে হবে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘কাবুলের পবিত্র গুরুদ্বারে হামলার খবরে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’