নানা সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি তেল কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অন্য উৎস থেকে না পেলে এ দেশ থেকেই তেল আনবে তারা।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বার্তা সংস্থা এপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম সিলন টুডে।
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর পশ্চিমা ও ইউরোপের অনেক দেশই রাশিয়ার তেল কিনবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। তবে এ পথে না হেঁটে সস্তায় তাদের তেল কেনার কথা জানিয়েছে ভারতসহ কয়েকটি দেশ।
সার্বিক পরিস্থিতিতে হয়তো শ্রীলঙ্কা রাশিয়া থেকে তেল কিনতে বাধ্য হতে পারে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।
তিনি বলেন, প্রথমে অন্য উৎস থেকে জ্বালানি তেল নিতে চেষ্টা করব। তবে মস্কো থেকে তেল কিনতে হতে পারে। রাশিয়া আমাদের গম পাঠানোরও প্রস্তাব করেছে।
এই মুহূর্তে দেশ অনেক ঋণী হলেও চীন থেকে আরও ঋণ নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান রনিল বিক্রমাসিংহে।
দুই কোটির বেশি জনসংখ্যার এই দেশে চলতি বছর অর্থাৎ আগামী ছয় মাস চলতে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি আমদানি করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া দেশটির রান্নার গ্যাস আমদানি করতে হবে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশরাজের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র।
দেশটিতে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপর্যস্ত জনজীবন। মূল্যস্ফীতি, দুর্বল সরকারি অর্থব্যবস্থা এবং করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।
লঙ্কান সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটনশিল্প ধসে পড়েছে, রেমিট্যান্স পৌঁছেছে তলানিতে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ নেমে এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারে।
বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে জ্বালানি আমদানি কমে যাওয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কায় দিনের অর্ধেক বা এর বেশি সময় চলছে লোডশেডিং; খাবার, ওষুধ ও জ্বালানিসংকটে ক্ষোভ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গত কয়েক বছর শ্রীলঙ্কার রাজনীতি বেশ টালমাটাল ছিল। এই অবস্থায় দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে।
সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতিকে দায়ী করেন বিক্ষোভকারীরা। এমন প্রেক্ষাপটে বিক্ষোভরতদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রাণ গেছে পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজনের।
একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজপাকসেকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। নতুন করে এই পদে আসেন রনিল বিক্রমাসিংহে। গঠন করা হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভাও। তবে দেশটির সংকট কাটছেই না।