পাকিস্তানের করাচিতে নিজ বাসায় মৃত্যু হয়েছে জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) আইনপ্রণেতা ড. আমির লিয়াকতের।
আবেগঘন ভিডিওতে ‘পাকিস্তানকে বিদায়’ জানানোর এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।
লিয়াকতের গৃহকর্মী জাভেদের বরাত দিয়ে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, করাচির খুদাদাদ কলোনির বাসায় অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় আমিরকে। এর পরপরই ৫০ বছর বয়সী জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
স্থানীয় চিপ্পা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রধান রমজান চিপ্পা জানান, হাসপাতালে নেয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগে মৃত্যু হয় আমিরের।
রমজান জানান, শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী করাচির ক্লিফটনে আব্দুল্লাহ শাহ গাজীর মাজার এলাকায় মা-বাবার কবরের পাশে শায়িত করা হবে আমিরকে।
এ দানবীর আরও জানান, সাবেক আইনপ্রণেতার দাফনের দায়িত্ব নেবেন তিনি।
পারিবারিক সূত্রগুলো দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, দাফনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যুক্তরাজ্যে থাকা আমিরের ছেলের দেশে আসার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে।
সাবেক আইনপ্রণেতার মৃত্যুর খবর পেয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মুলতবি করেন স্পিকার পারভেজ আশরাফ।
কিছু সূত্র এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে জানায়, উপস্থাপকের ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল। তার গৃহকর্মী জাভেদ বৃহস্পতিবার সকালে বেশ কয়েকবার দরজায় ধাক্কাধাক্কি করলেও কোনো সাড়া পাননি।
জাভেদ জানান, বুধবার রাতে বুকে ব্যথার কথা জানিয়েছিলেন আমির।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্যের (এমএনএ) চালক পুলিশকে জানান, এক দিন আগে (বুধবার) আমিরের কক্ষ থেকে কান্নার শব্দ পেয়েছিলেন তিনি।
অন্যদিকে গৃহকর্মী জাভেদ জানান, বুধবার রাতভর কান্না করছিলেন আমির। তিনি মারা যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছিলেন।
জাভেদ বলেন, ‘তিনি (আমির) বারবার বলছিলেন, সে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমি জানি না, সে আমার ওপর কালো জাদু করেছে কি না, বুঝতে পারছি না। আমার মনে হচ্ছে, আমি মারা যাচ্ছি।’
জাভেদ জানান, তিনি আমিরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জবাবে আমির তাকে জানিয়েছেন, তার স্ত্রী এটা করেছে।
ময়নাতদন্তের জন্য ড. আমিরের মরদেহ লাহোরের জিন্নাহ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
আমিরের মৃত্যুতে অন্য কোনো পক্ষের হাত দেখছে না পুলিশ, তবে ময়নাতদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
১৯৭২ সালের ৫ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন আমির লিয়াকত। করাচিভিত্তিক রাজনৈতিক দল মুত্তাহিদ কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানে (এমকিউএম-পি) যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে অভিষেক হয় তার। পরবর্তী সময়ে সাবেক ইমরানের দল পিটিআইয়ে যোগ দেন তিনি।
পাকিস্তানের সাবেক সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সময়ে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন আমির। তিনি ২০০২ এবং ২০১৮ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
রোজার মাসে টেলিভিশন শো উপস্থাপনা করতেন ড. আমির। ইফতারের আগে-পরে শো প্রচার করা হতো।
২০০১ সালে একটি প্রাইভেট চ্যানেলের মধ্য দিয়ে শোবিজ ক্যারিয়ার শুরু হয় তার। ‘আলিম অনলাইন’ নামের একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে শুরুর দিকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি।
শোক
ড. আমিরের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি, সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারপারসন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারিসহ অনেকে।