বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই ছবির ৫০ বছর

  •    
  • ৮ জুন, ২০২২ ১৫:৫৭

ছবিটির জন্য ১৯৭৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জিতে নেন নিক উট। এর মধ্য দিয়ে শিশু কিমের কথা সামনে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সারা বিশ্বে। ওয়াশিংটনের ভিয়েতনাম নীতির বিরুদ্ধে সড়কে নামেন যুক্তরাষ্ট্রের হাজারও নাগরিক। এতে বেকায়দায় পড়ে ফেডারেল প্রশাসন ও শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় শেষ পর্যন্ত ভিয়েতনামে আগ্রাসন কমাতে বাধ্য হয় আমেরিকা। এর দুই বছর পর ১৯৭৫ সালে দুই দশক ধরে চলতে থাকা ভয়াবহ এই যুদ্ধ শেষ হয়।

যুদ্ধের সময় ১৯৭২ সালে ৮ জুন ছবিটি তোলা হয় দক্ষিণ ভিয়েতনামের একটি গ্রাম থেকে। পেছনে আমেরিকার যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা রাসায়নিক নাপাম বোমার ধোঁয়া।

ত্রাঙ্গ ব্যাঙ গ্রামের আরও অনেকের সঙ্গে তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে নগ্ন হয়ে দৌড়াচ্ছে ৯ বছরের এক কন্যাশিশু। এই রাসায়নিকে আগুন লাগলে কয়েক মিনিটের মধ্যে আশপাশের তাপমাত্রা এক হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে। বোমার সেই তীব্র জ্বালা টের পায় ৯ বছরের শিশু পান থি কিম ফুক। বিশ্বের মানুষের কাছে তিনি এখন ‘নাপাম গার্ল’ নামেই পরিচিত।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) ফটোগ্রাফার নিক উটের তোলা এই ছবিটি হাতে পাওয়ার পর কী করবেন, তা বুঝতে পারছিলেন না নিউ ইয়র্ক টাইমসের এডিটররা। ছবির শিশুটির নগ্নতা নিয়ে শঙ্কিত হন তারা। সাহস করে শেষ পর্যন্ত ছবিটা ছেপে দিয়েছিলেন পরের দিনের পত্রিকায়। যুক্তরাষ্ট্রের বর্বরতার সাক্ষী এই ছবি বদলে দিয়েছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি।

১৯৫৪ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধের প্রায় এক দশক পর ১৯৬১ সালে ভিয়েতনামের সব ধরনের সবুজের সঙ্গে বিদ্রোহী কমিউনিস্ট গেরিলাদের চিরতরে মুছে দিতে এমন রাসায়নিক বোমা ফেলার অনুমতি দেয় ফেডারেল সরকার।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ১৯৭২ সালে ৮ জুন ছবিটি তোলা হয়। পেছনে আমেরিকার যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা রাসায়নিক নাপাম বোমার বিষাক্ত ধোঁয়া। তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে নগ্ন হয়ে দৌড়াচ্ছে ৯ বছরের এক কন্যাশিশু। ছবি: এপি

এরপরই দক্ষিণাঞ্চলের গেরিলাদের বিলীন করে দিতে বোমার মাধ্যমে গ্যালন গ্যালন রাসায়নিক ফেলতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা।

স্থানীয় একটি মন্দিরের চত্বর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটে যাচ্ছিল কিম ফুক ও গ্রামের লোকজন। যুদ্ধবিমান রেহাই দেয়নি কাউকেই। ওপর থেকে ফেলতে থাকে রাসায়নিক বোমা। ঝলসে গিয়ে তীব্র যন্ত্রণায় সেখানেই মারা যায় কিম ফুকের কয়েকজন প্রতিবেশী। পুড়ে যায় ফুকের পোশাক। ঝলসে যায় তার শরীরের কিছু অংশ। জ্বলে যাচ্ছি! জ্বলে যাচ্ছি! এমন আর্তনাদ করতে করতেই দৌড়াতে থাকে শিশু কিম।

সেই দুর্লভ আর কঠিন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেন এপির চিত্রসাংবাদিক নিক উট।

ছবিটি বিশ্বব্যাপী এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে শুধু এই ছবি নিয়েই সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিক্সন। ছবিটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রেসিডেন্ট নিক্সনও।

এর তীব্র সমালোচনা করে নিক উট বলেছিলেন, ‘আমার তোলা এই ছবিটি ভিয়েতনাম যুদ্ধের মতোই ভয়াবহ সত্য। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখানোর জন্য কোনো কিছু সাজানোর দরকার নেই। সবই আছে ভিয়েতনামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।’

সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনের পরপরই আহত অন্য শিশুদের সঙ্গে কিমকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন নিক উট। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন কিমের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে থেমে যাননি সাংবাদিক। এক বছরের বেশি সময় চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুলেছিলেন কিমকে। রাসায়নিকে পুড়ে যাওয়া ত্বক প্রতিস্থাপনে প্রায় ১৭টি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল শিশু কিমের।

ছবিটির জন্য ১৯৭৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জেতেন নিক উট। এর মধ্য দিয়ে শিশু কিমের কথা সামনে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সারা বিশ্বে। ওয়াশিংটনের ভিয়েতনাম নীতির বিরুদ্ধে সড়কে নামেন যুক্তরাষ্ট্রের হাজারও নাগরিক। এতে বেকায়দায় পড়ে ফেডারেল প্রশাসন ও শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় শেষ পর্যন্ত ভিয়েতনামে আগ্রাসন কমাতে বাধ্য হয় আমেরিকা। এর দুই বছর পর ১৯৭৫ সালে দুই দশক ধরে চলতে থাকা ভয়াবহ এই যুদ্ধ শেষ হয়।

এই যুদ্ধে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বোমা ফেলা হয় ভিয়েতনামে। মাইলের পর মাইল বন-জঙ্গল ধ্বংস করা হয়েছিল রাসায়নিক বোমায়। অধিকাংশ চাষের জমি হয়ে গিয়েছে অনাবাদী।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ হাজার সেনা, ভিয়েতনামের প্রায় আড়াই লাখ সেনাসহ যুদ্ধে নিহত হয়েছিল অন্তত ৩০ লাখ মানুষ।

কানাডায় থাকেন কিম ফুক

১৯৯২ সালে কিম ফুকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয় কানাডা সরকার। এরপর যুদ্ধে ভয়াবহতা নিয়ে বিভিন্ন সেমিনারে সচেতনতা বাড়াতে সংযোগ চালান তিনি। এই নিয়ে বই প্রকাশও করেন কিম।

যুদ্ধের মুহূর্তে দেখা হয়েছিল সাংবাদকর্মী নিক আর শিশু কিমের। তাদের সেই হঠাৎ যোগাযোগ এখনও রয়েছে। নাপাম গার্ল নামে পরিচিত সেই শিশুটির বয়স এখন ৫৯।

এ বিভাগের আরো খবর