দলের নেতা ও মুখপাত্রদের টিভি বিতর্কে অংশ নেয়ার ব্যাপারে নতুন নিয়ম করেছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি। এখন থেকে কেবল দলটির অনুমোদিত মুখপাত্র এবং প্যানেলিস্টরা টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিতে পারবে।
নূপুর শর্মা নামে বিজেপি এক নেত্রীর টিভি বিতর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে এমন সিদ্ধান্ত এলো।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন থেকে টিভি বিতর্কে অংশ নিতে মুখপাত্র এবং প্যানেলিস্ট নির্ধারণ করে দেবে বিজেপির মিডিয়া সেল।
এ ছাড়া কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে সমালোচনা যাতে না করে সে ব্যাপারেও দলের মুখপাত্রদের সতর্ক করা হয়েছে।
উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলাকালে সীমা লংঘন না করতে প্যানেলিস্টদের বলা হয়েছে। তাদের ভাষাকে সংযত রাখতে এবং রাগান্বিত না হতে আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
কোনো উসকানিতেই তারা দলের মতাদর্শ বা আদর্শ লংঘন করতে পারে না বলে জানানো হয়েছে।
কোনো টিভি আলোচনায় যাওয়ার আগে আলোচনার বিষয়বস্তু দেখে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে এবং দলীয় নীতিতে ওই ব্যাপারে কী বলা আছে তা দেখে যেতে মুখপাত্রদের নির্দেশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
বিজেপির একটি সূত্র জানিয়েছে, মুখপাত্র এবং প্যানেলিস্টদের বিতর্কের বিষয়বস্তুতেই থাকা উচিত। তাদের কোনো ‘ফাঁদে’ পা দেয়া উচিত নয়।
মুখপাত্রদের সরকারের সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের ওপর মনোযোগ দিতে বলেছে দলটি।
এর আগে জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে নূপুর মহানবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
ইসলাম সম্পর্কেও তার কিছু মন্তব্যের জেরে দেশটিতে মুসলিম সমাজে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। নূপুরের বক্তব্যের প্রতিবাদে গত শুক্রবার কানপুরে বনধ পালনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন রাজ্যে এরই মধ্যে নূপুরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শুধু নূপুরই নন, মহানবীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন বিজেপির আরেক মুখপাত্র নবীন কুমার জিন্দাল।
এ ইস্যুতে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় বিজেপির পক্ষ থেকে রোববার নূপুর ও নবীনকে ছয় বছরের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে ক্ষোভ
মহানবীকে নিয়ে বিজেপির দুই নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে দলটি। অন্তত ১৫টি দেশ এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশগুলো থেকে।
ভারতের শ্রমবাজারের বড় একটা অংশ থাকে যেসব দেশে, সৌদি আরব, ওমান, বাহরাইন, জর্ডান, লিবিয়া সেসব দেশে হয়েছে প্রতিবাদ।
বাদ যায়নি আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা কাতার, কুয়েত এবং ইরানও। এসব দেশেরও ক্ষোভ সামলাতে হচ্ছে ভারতকে।
এসব দেশে ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম এবং পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, সেসব দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণাও দিচ্ছেন মুসলমানরা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সুপার শপ থেকে ভারতীয় পণ্য সরিয়ে ফেরার ঘটনাও ঘটেছে।
মহানবীর বিরুদ্ধে বিজেপি মুখপাত্রের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে রোববার ভারতীয় দূতদের তলবও করে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ।