বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমরিনার মৃত্যুর দায় কার?

  •    
  • ১ জুন, ২০২২ ২৩:২০

সরকার কয়েক মাস ধরে চলাফেরা এবং যোগাযোগের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। অনেকটা করোনার সময় লকডাউনের মতো, যা জীবিকাকে আরও চাপে ফেলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সে কারণেই আমরিনা তার দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিরেছিলেন।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ও সংগীতশিল্পী ছিলেন আমরিনা ভাট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছিল তার হাজার হাজার ফলোয়ার। গত ২৫ মে গুলি করে তাকে খুন করা হয়। পরিবারের মূল উপার্জনক্ষম সদস্যের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ সবাই

ঘটনার দিন আমরিনার আত্মীয় যুবায়ের আহমেদ শেখ মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। এ সময় তিনি গুলির শব্দ শুনতে পান, তারপর চিৎকার।

দ্রুত ছুটে যান ঘটনাস্থলে। দেখেন ঘরে পড়ে আছেন ৩০ বছরের আমরিনা। তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

ঘটনার সময় আমরিনার সঙ্গে ছিলেন তার ১১ বছরের ভাগনে ফারহান। সে জানায়, একটি প্রোগ্রামের বুকিং দেয়ার জন্য দুজন লোক এসেছিল আমরিনার কাছে। প্রোগ্রামের বিষয়ে যখন তাদের কাছে জানতে চান আমরিনা, তখন তারা বন্দুক বের করে গুলি চালায়।

প্রাণ বাঁচাতে আমরিনা ভেতরের দিকে দৌড় দেন। তখন একজন তার পিছু নেয় এবং আবার গুলি করে। ফারহানের হাতেও লাগে একটি গুলি।

আহত আমরিনা এবং ফারহানকে হাসপাতালে নিতে হন্যে হয়ে গাড়ি খুঁজছিল তাদের পরিবার। একসময় গাড়ি পাওয়া যায়। তবে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা যান আমরিনা। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে ভাগনে ফারহান।

ভারত অধ্যুষিত কাশ্মীরে এ ধরনের ধারাবাহিক হামলা কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছে। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই অঞ্চলটির পুরো মালিকানা দাবি করে এলেও দুটি অংশে ভাগ করে কাশ্মীরে শাসন চালাচ্ছে দিল্লি-ইসলামাবাদ। ১৯৮৯ সাল থেকে দিল্লির শাসনের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক বিদ্রোহও দেখেছে কাশ্মীরবাসী।

আমরিনার ওপর হামলার কয়েক দিন আগে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন সরকারি কর্মচারীকে তার অফিসের ভেতর গুলি করে হত্যা করা হয় বুদগাম জেলায়। এ সপ্তাহে প্রাণ হারিয়েছেন এক স্কুলশিক্ষক।

আমরিনার মৃত্যুর দুদিন পর কাশ্মীর পুলিশ জানায়, তারা খুনিদের হত্যা করেছে। খুনিরা সম্প্রতি পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বায় যোগ দিয়েছিল বলেও দাবি করে পুলিশ। তবে তারা কেন আমরিনাকে টার্গেট করেছিল, তা নিশ্চিত করতে পারেনি কাশ্মীর পুলিশ।

Both killed newly joined local #terrorists identified as Shahid Mushtaq Bhat R/O Hafroo Chadoora #Budgam & Farhan Habib R/O Hakripora #Pulwama. They had #killed TV artist on the instruction of LeT Cmdr Lateef. 01 AK 56 rifle, 4 magazines and a pistol recovered: IGP Kashmir https://t.co/VeoHZRkdEO

— Kashmir Zone Police (@KashmirPolice) May 26, 2022

আমরিনার বাবা খাজির মহম্মদ ভাট বলেন, ‘আমার মেয়ে ছিল পরিবারের মূল উপার্জনকারী ব্যক্তি। ওর ওপর কেন হামলা জানি না। ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ্নে আছি।’

খাজির ভাট জানান, শুরুতে মেয়ের গান গাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি। সংগীতে মনোযোগ দেয়ার জন্য কিশোর বয়সে তিনি স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে আমরিনার মা ২০০৮ সালে মারা গেলে সংগীতে আর বাধা দেননি তিনি।

‘আমার স্ত্রী আমাকে বলেছিল আমরিনা আমার বিরোধিতার কারণে আঘাত পেয়েছিল। তার আবেগকে সম্মান জানানো দরকার আমাদের।’

মেয়ের ওপর কেন হামলা হয়েছে জানেন না খাজির মহম্মদ ভাট। ছবি: সংগৃহীত

আমরিনা তার পরিবারের সহযোগিতায় ছোট-বড় কয়েকটি চ্যানেলে কাজ করতে শুরু করেন। তবে জনপ্রিয়তা পান সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও আপলোড শুরুর পর থেকে।

আমরিনা যখন মারা যান, ইনস্টাগ্রামে তার ২৫ হাজারের বেশি ফলোয়ার ছিল। এই প্ল্যাটফর্মটিতে তিনি সিনেমার গান এবং সংলাপে নিজের লিপ-সিঙ্কিং ভিডিও আপলোড করতেন। শোকবার্তায় প্লাবিত হওয়া সে প্রোফাইলটি এখন মুছে ফেলা হয়েছে।

ইউটিউবে আপলোড করতেন নানা ইস্যু নিয়ে ছোট ছোট ডিভিও। গত সোমবার পর্যন্ত আমরিনার ১৯ হাজারের বেশি সাবস্ক্রাইবার ছিল। বিদ্যুৎ সংকটসহ নানা সমস্যার তথ্য তুলে ধরায় দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন আমরিনা।

খাজির ভাট বলেন, ‘আমরিনা ভারতের স্বাধীনতা দিবস এবং প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো অনুষ্ঠানগুলোয় অংশ নিত। বেশ কয়েকটি পুরস্কার রয়েছে তার।

‘সে জনপ্রিয় ছিল, সবাই তাকে চিনত। ওর মৃত্যুর পর বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরা আমাদের সঙ্গে দেখা করে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন।’

কাশ্মীরের বেশির ভাগ টেলিভিশন শিল্পীদের মতো আমরিনারও অভিনয়ের কাজ পাওয়া কঠিন ছিল। বিশেষ করে যখন থেকে কাশ্মীরে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী দূরদর্শন বন্ধ হয়ে যায়।

বুদগামে আমরিনার বাড়িতে শোকার্তরা। ছবি: সংগৃহীত

প্রবীণ স্থানীয় এক অভিনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, ‘অভিনয়ের সুযোগ গত কয়েক বছরে কমে গেছে। ২০১৯ সাল থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, যখন ভারত ৩৭০ অনুচ্ছেদ (কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা) প্রত্যাহার করেছিল।’

সরকার কয়েক মাস ধরে চলাফেরা এবং যোগাযোগের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। অনেকটা করোনার সময় লকডাউনের মতো, যা জীবিকাকে আরও চাপে ফেলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সে কারণেই আমরিনা তার দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিরেছিলেন।

ভাগনে ফারহানের কাছে আমরিনা একজন মমতাময়ী খালা, যিনি তার স্কুলের ফি পরিশোধ করতেন, নতুন নতুন জামা কিনে দিতেন, মোবাইলে গেম খেলতে দিতেন।

ফারহান বলে, ‘আগামী বছর আমাকে কম্পিউটার কিনে দেয়ার প্রমিজ করেছিলেন।’

এ বিভাগের আরো খবর