করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই নতুন বৈশ্বিক আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মাঙ্কিপক্স। আফ্রিকায় আবির্ভাব হওয়া এই রোগটি এরই মধ্যে ১১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সর্বমোট ৮০ জনের দেহে শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাসটি। ডব্লিউএইচও সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সম্ভাব্য সন্দেহভাজন ৫০ জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে পর্যবেক্ষণে থাকা ব্যক্তিরা কোন দেশের, তা জানানো হয়নি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে ‘নাইজেরিয়া ভ্রমণ করে ফেরা’ এক ব্যক্তির দেহে প্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয় যুক্তরাজ্যে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজেদ জাভিদ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ২০ জন মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্য ছাড়াও ইতালি, সুইডেন, স্পেন, পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায়ও শনাক্ত হয়েছে মাঙ্কিপক্স।
১৯৮০ সালে নির্মুল হওয়া গুটিবসন্তের কাছাকাছি এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। তবে এর লক্ষণগুলো অনেকটা চিকেনপক্সের মতো। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা ও ক্লান্তি। এর ফুসকুড়িগুলো মুখে ওঠা শুরু করে, পরে পুরো দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
এর লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে এবং পরের দুই থেকে ৪ সপ্তাহ তা স্থায়ী হয়। যদিও মাঙ্কিপক্সের কোনো প্রতিষেধক নেই, তবে বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধারণা করছে, এর মৃত্যুর হার হবে ৩ থেকে ৬ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর ক্ষেত্রে সাধারণত শ্বাস-প্রশ্বাসের ড্রপলেট এবং সংক্রমিত রোগীর ত্বকের ক্ষতের সংস্পর্শে এলে।
মাঙ্কিপক্সকে এর আগে কখনো যৌন সংক্রামক রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি, তবে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, হয় তারা সমকামী নয়তো উভকামী পুরুষ। স্পেনে ও পর্তুগালের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, দেশ দুটিতে শনাক্ত হওয়া প্রায় সব রোগীই সমকামী। কানাডার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, শনাক্ত হওয়া প্রায় সবাই সমকামী পুরুষদের সঙ্গে জড়িত।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এজেন্সির গবেষক মাতেও প্রোচাজকা মঙ্গলবার বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডে বর্তমান মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে সমকামী ও উভকামীদের যৌন নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।’
একাধিক দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত যেসব ঘটনা তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন, তার মধ্যে মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে যুক্ত ক্ষতগুলো মূলত পুরুষ রোগীদের যৌনাঙ্গে দেখা যাচ্ছে। ফলে তারা ধারণা করছেন যৌনতার মাধ্যমে এই রোগ ছড়াতে পারে।