ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসির জ্ঞানবাপী মসজিদের ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দেয়ার অভিযোগে এক সহযোগী অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার রতন লাল দিল্লি ইউনিভার্সিটির হিন্দু কলেজে শিক্ষকতা করেন বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
রতন লালের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার ধর্মীয় অবমাননার মামলা করেছিলেন দিল্লির এক আইনজীবী। এর পরই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে গ্রেপ্তার এই সহযোগী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে।
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় মসজিদটির পুকুরে শিবলিঙ্গ পাওয়ার যে দাবি করেছিল, তার সমালোচনা করে পোস্ট দিয়েছিলেন রতন লাল। এই পোস্টের সমর্থনে তিনি আরেকটি পোস্ট দিয়ে লেখেন, ভারতে কোনো কিছু নিয়ে কথা বললেই তা অন্যের অনুভূতিতে আঘাত হানে।
হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, জ্ঞানবাপী মসজিদ যে জমিতে গড়ে উঠেছে, তা আসলে হিন্দুদের। সুতরাং সেই জমি হিন্দুদের ফিরিয়ে দেয়া হোক।
মোগল সম্রাট অওরঙ্গজেব দুই হাজার বছরের পুরোনো কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একাংশ ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ গড়ে তোলেন বলে দাবি তুলে সেখানে ‘হিন্দুত্বের ছাপ’ খুঁজতে প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষার দাবি জানানো হয় আদালতে।
অন্যদিকে জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে ‘দেবদেবীর মূর্তি’ আছে দাবি করে সেগুলো পূজা করার অনুমতি চেয়ে ২০২১ সালে আদালতে একটি পৃথক আবেদন করেন পাঁচ নারী।
সম্প্রতি মসজিদের পুকুরে শিবলিঙ্গ রয়েছে দাবি ওঠার পর দুটি গম্বুজ, ভূগর্ভস্থ অংশ, পুকুরসহ সব জায়গার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা এবং ভিডিও করে বারানসির আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হয়।
এরপর আদালতের নির্দেশে মসজিদ চত্বরে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ ঘর (তাহখানা), অজুখানা এবং আশপাশের এলাকা সিল করে দেয় প্রশাসন।
সর্বশেষ কাশী বিশ্বনাথ মন্দির–জ্ঞানবাপী মসজিদ মামলাটি দেওয়ানি আদালত থেকে জেলা আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
অবশ্য মসজিদ-মন্দির নিয়ে ভারতে বিবাদ তৈরি হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে ষোড়শ শতকে মোঘল সম্রাট বাবরের সময় তৈরি করা বাবরি মসজিদ নিয়ে বিবাদ দেখা দেয় ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর।
ওই সময় মসজিদের জায়গাটি হিন্দুধর্মের অন্যতম আরাধ্য দেবতা রামের জন্মস্থান এবং সেখানে মসজিদ হওয়ার আগে একটি মন্দির ছিল দাবি করে তা ধ্বংস করে দেয়া হয়।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে হওয়া দাঙ্গায় ভারতে দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। এরপরও অযোধ্যা ইস্যু নিয়ে ভারতে একাধিকবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণহানি হয়েছে বহু মানুষের।
২০২০ সালের নভেম্বরে বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানটিতে একটি হিন্দু মন্দির বানানোর পক্ষে রায় দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।