ইসরায়েলি আগ্রাসনে পশ্চিম তীরে ‘সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাসাফের ইয়াত্তায় অন্তত ১২০০ ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেল আবিব, তা যুদ্ধাপরাধের সামিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। এ বিষয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা উচিত।
এক যৌথ বিবৃতিতে সোমবার জাতিসংঘের তিন বিশেষজ্ঞ জানান, মাসাফের ইয়াত্তা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেয়ার নীতি বহাল রেখেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত নিপীড়নের চর্চাকে স্থায়ী করতে ইসরায়েলি বিচার ব্যবস্থাও সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
জোরপূর্বক উচ্ছেদের অনুমতি দেয়ার জন্য আদালতের সিদ্ধান্তটি ‘আরও বেশি উদ্বেগজনক’। কারণ অঞ্চলটি ইসরায়েলি সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য নেয়া হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কীভাবে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের ওপর অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে? ইসরায়েল এলাকাটি খালি করার জন্য কোনো ‘অবশ্যকীয় সামরিক প্রয়োজনীয়তা’ দেখায়নি।
ইসরায়েলি হাইকোর্ট অফ জাস্টিস চলতি মাসের শুরুতে ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত অঞ্চলটি অধিগ্রহণের পক্ষে রায় দেয়। এতে অন্তত ৫০০ শিশুসহ ১২০০ ফিলিস্তিনি আশ্রয়হীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
গত ৪ মে ইসরায়েলের হাইকোর্ট উচ্ছেদ ঠেকাতে মাসাফের ইয়াত্তার বাসিন্দাদের আপিল খারিজ করে দেয়। এই রায়ে কার্যকরভাবে ফিলিস্তিনিদের দুই দশকের আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হেব্রনের দক্ষিণের এই অঞ্চলকে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঘোষণা করেছে। নাম দিয়েছে-ফায়ারিং জোন ৯১৮।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলি বাহিনী ইতোমধ্যে খ্রিবেত আল ফাখিয়েত এবং আল-মারকেজের মাসাফের ইয়াত্তা সম্প্রদায়ের কাঠামো ভেঙে দিয়েছে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ বলেন, ‘১৯০৭ হেগ রেজ্যুলেশন এবং চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল।
‘তার বদলে অধিকৃত অঞ্চলে ইহুদি বসতি স্থাপনে জোর দিচ্ছে ইসরায়েল। সেখানে বাস করা ফিলিস্তিনের তাড়িয়ে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘনের চেষ্টা চলছে। এটা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে।’
জাতিসংঘের হিসাবে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত আবাসিক, শিক্ষা, ব্যবসায়িক এবং চিকিৎসা অবকাঠামোসহ অন্তত ৮ হাজার ৪১৩টি ফিলিস্তিনি ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। এসবের কারণে ১২ হাজারের বেশি বাসিন্দা বাস্তচ্যুত হয়েছেন; পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৪ জন ফিলিস্তিনি।
এ ছাড়া ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে অন্তত ৬ হাজার ৩০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। পাল্টা হামলায় প্রাণ গেছে ২৬৮ ইসরায়েলির।