অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে।
শ্রীলঙ্কাভিত্তিক ডেইলি মিরর প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তিনি শপথ নেবেন বলে জানিয়েছে তার দল।
গত সোমবার মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন রনিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার আলোচনা করেন বিক্রমাসিংহে। এরপরই জানা যায় তিনিই হচ্ছেন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে বেশি শোনা গিয়েছিল প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা সাজিদ প্রেমাদাসার নাম। কিন্তু তিনি জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব তিনি নেবেন যদি দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে তার পদ থেকে সরে যান।
জানা গেছে, শপথ শেষে রনিল বিক্রমাসিংহে কলম্বোর একটি মন্দিরে যাবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তার কাজ শুরু করবেন।
গত কয়েক মাস ধরেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে চরম মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে, মুদ্রাস্ফীতিও আকাশছোঁয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ।
এ অবস্থায় ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে। এক পর্যায়ে রাজাপাকসে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।
বিক্ষোভ দমাতে এপ্রিলের শুরুতে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপ বিক্ষোভ দমাতে ব্যর্থ হয়। উল্টো মাত্রা আরও তীব্র হয়।
সরকারবিরোধী আন্দোলন গত সোমবার আরও বড় রূপ ধারণ করে। সেদিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনে বসা বিক্ষুব্ধদের ওপর হামলা চালায় সরকার সমর্থকরা। এতে বেশ কিছু জায়গায় সংঘর্ষ হয়। দুই শতাধিক মানুষ আহত হন।
সংঘর্ষে সরকারদলীয় এমপি, পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন নয়জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ।
আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
বিক্ষোভকারীরা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের কুরুনেগালা শহরে মাহিন্দা রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। অন্য বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীর বাড়ি ও গাড়িতেও আগুন দেয়া হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে কলম্বো এবং পরে পুরো দেশে জারি করা হয়েছে কারফিউ।
এরপর সেনা পাহারায় কলম্বোর সরকারি বাসভবন ছাড়েন মাহিন্দা। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ত্রিনকোমালিতে একটি নৌ ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন মাহিন্দা ও তার পরিবারের সদস্যরা।