সরকারবিরোধী আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়া মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী।
রাজধানী কলম্বোয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের সামনে রাতভর বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এরপর মঙ্গলবার ভোরে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয় মাহিন্দা ও তার পরিবারের সদস্যদের।
তবে সেনাবাহিনী তাদের নিয়ে কোথায় গেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। রাজপাকসে বা এই বাহিনীর পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ভোরে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী।
তিনি জানান, তাদের সরিয়ে নেয়ার আগে ওই বাসভবনের সামনে অন্তত ১০টি পেট্রল বোমা ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
পদত্যাগের পর মাহিন্দা রাজাপাকসে বাসভবন ছাড়লেও তার ছোট ভাই ও দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট ভবনেই রয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ ও মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশটিতে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের কথা রয়েছে। গঠন করা হবে মন্ত্রিসভাও।
বেশ কিছুদিন ধরেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে উত্তাল শ্রীলঙ্কা; চলছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন।
এক বৈঠকে গোতাবায়া সংকট সমাধানে বড় ভাই মাহিন্দাকে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন গত শুক্রবার। এর পরই সোমবার পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা। তবে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া পদ ছাড়ছেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
ডেইলি মিরর বলছে, পার্লামেন্টে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন প্রেসিডেন্ট। অবশ্য বিরোধী এসজেবি পার্টির নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছে তার দল।
শ্রীলঙ্কায় টানা কয়েক দিন ধরে চলা সরকারবিরোধী আন্দোলন সোমবার আরও বড় রূপ ধারণ করে। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনে বসা বিক্ষুব্ধদের ওপর হামলা চালায় সরকার সমর্থকরা। বেশ কিছু জায়গায় সংঘর্ষ হয়। দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়ে ভর্তি হয় হাসপাতালে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। প্রথমে কলম্বো এবং পরে পুরো দেশে জারি করা হয়েছে কারফিউ। এমন প্রেক্ষাপটেও নির্দেশনা অমান্য করেই মাঠে আছে আন্দোলনকারীরা।
এদিন রাজধানী কলম্বোর কাছে নিত্তামবুয়া এলাকায় নিহত হন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা পদুজেনা পেরামুনার (এসএলপিপি) এমপি অমরাকীর্থি আথুকোরালা।
সরকারবিরোধীদের হামলার মুখে পড়ার পর এই এমপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মৃত্যু নিজের ছোড়া গুলিতেই হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ ছাড়া সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের কুরুনেগালা শহরে মাহিন্দা রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়ি ‘মেদামুলানা ওয়ালাওয়াতে’ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। অন্য বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীর গাড়িতেও আগুন দেয়া হয়েছে।
বৈদেশিক রিজার্ভের সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতিতে স্মরণকালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় ধুঁকছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। এ জন্য রাজাপাকসে সরকারের দুর্নীতিকে দুষছে দেশটির জনগণ।