শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধীদের হামলার মুখে পড়ার পর যে সংসদ সদস্যের (এমপি) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে; তার মৃত্যু নিজের ছোড়া গুলিতেই হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
সোমবার রাজধানী কলম্বোর কাছে নিত্তামবুয়া এলাকায় নিহত হন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা পদুজেনা পেরামুনার (এসএলপিপি) এমপি অমরাকীর্থি আথুকোরালা।
পুলিশের বরাত দিয়ে শ্রীলঙ্গার সংবাদমাধ্যম ফিন্যানশিয়াল টাইমস জানায়, বিক্ষুব্ধরা এমপি অমরাকীর্থির গাড়ি আটকে দিলে গুলি ছোড়েন তিনি। এতে দুজন গুরুতর আহন হন। এর মধ্যে একজন মারা যান।
পুলিশের একজন সদস্য বার্তা সংস্থা এএফপিকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গুলি ছোড়ার পর এমপি স্থানীয় একটি ভবনে আশ্রয় নেন। এরপর আন্দোলনকারীরা ওই ভবনটি ঘিরে ফেলে। পরে নিজের রিভলভারের ছোড়া গুলিতে নিহত হন এমপি অমরাকীর্থি।
বেশ কিছুদিন ধরেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে উত্তাল শ্রীলঙ্কা; চলছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই সোমবার পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তবে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
টানা কয়েক দিন ধরে চলা সরকারবিরোধী আন্দোলন সোমবার আরও বড় রূপ ধারণ করে। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনে বসা বিক্ষুব্ধদের ওপর হামলা চালায় সরকার সমর্থকরা। বেশ কিছু জায়গায় সংঘর্ষ হয়। শতাধিক মানুষ আহত হয়ে ভর্তি হয় হাসপাতালে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। প্রথমে কলম্বো এবং পরে পুরে দেশে জারি করা হয়েছে কারফিউ। এমন প্রেক্ষাপটেও নির্দেশনা অমান্য করেই মাঠে আছে আন্দোলনকারীরা।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের কুরুনেগালা শহরে দেশটির সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়ি ‘মেদামুলানা ওয়ালাওয়াতে’ আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। অন্য বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীর গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
বৈদেশিক রিজার্ভের সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতিতে স্মরণকালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় ধুঁকছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। এ জন্য রাজাপাকসে সরকারের দুর্নীতিকে দুষছে দেশটির জনগণ।
এমন প্রেক্ষাপটে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে দেশটিতে শুক্রবার রাতে দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
সব মিলিয়ে বিক্ষোভে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। দোকানপাট, গণপরিবহন বন্ধ করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে সাধারণ জনগণ। এতে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ আছে বিপাকে।