বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিগারেট টানার পরামর্শ দিতেন ডাক্তাররাও

  •    
  • ৩ মে, ২০২২ ১২:৩৭

১৯৩০-১৯৫০ সালের মধ্যে বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে প্রভাবক হিসেবে কাজ করত এমন ট্যাগ লাইন যেখানে বলা হতো, ‘চিকিৎসকরা সুপারিশ করেন’। মজার বিষয়, সিগারেটের মতো ক্ষতিকর পণ্যের বিজ্ঞাপনেও ব্যবহার হতো এই ট্যাগ লাইন।

ওষুধের ইতিহাসে বড় পরিবর্তন এসেছে কয়েক দশকে। ডাক্তার-রোগীর দূরত্ব কমেছে। একটা লম্বা সময় পর্যন্ত স্বাস্থ্যের ওপর কর্তৃত্ব করেছিলেন চিকিৎসকরা।

রোগীরা একজন চিকিৎসককে ভরসা করেন তার শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসরণ করতেন তারা। আর এই সুযোগটাই সে সময়ে লুফে নিয়েছিল তামাক কোম্পানিগুলো।

১৯৩০-১৯৫০ সালের মধ্যে বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে প্রভাবক হিসেবে কাজ করত এমন ট্যাগ লাইন যেখানে বলা হতো, ‘চিকিৎসকরা সুপারিশ করেন’। মজার বিষয়, সিগারেটের মতো ক্ষতিকর পণ্যের বিজ্ঞাপনেও ব্যবহার হতো এই ট্যাগ লাইন।

তামাক প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপনে ‘গলার চিকিৎসক’ (সাদা কোট পরিহিত মডেলদের) ছবি ব্যবহার করত। সেখানে চিকিৎসক দাবি করতেন, কাশির জন্য সিগারেট নয়; বাতাসের ধুলা, জীবাণু এবং ম্যানথলের ঘাটতিকে দায়ী করতেন।

১৯২০-এর দশকে সিগারেটের প্রভাবশালী ব্র্যান্ড ছিল লাকি স্ট্রাইক। আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির তৈরি এই ব্র্যান্ডটিই প্রথম তার বিজ্ঞাপনে একজন চিকিৎসকের ছবি ব্যবহার করেছিল। বিজ্ঞাপনে এই প্রতিষ্ঠান দাবি করে, ২০ হাজারের বেশি চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন ‘লাকি সিগারেট কম ক্ষতিকর’।

যে বিজ্ঞাপনী সংস্থা লাকি স্ট্রাইককে প্রচার করেছিল, তারা চিকিত্সকদের বিনা মূল্যে সিগারেটের কার্টন পাঠিয়েছিল। তারপর তাদের প্রশ্ন করা হয়, এই ব্র্যান্ড সংবেদনশীল এবং কোমল গলার জন্য অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর কি না। সংস্থাটি দাবি করে, তাদের বিশেষ টোস্টিং প্রসেসের কারণে সিগারেট থেকে বের হয় মসৃণ ধোঁয়া; যা মোটেও ক্ষতিকর না।

১৯৩০-এর দশকের মাঝামাঝি লাকি স্ট্রাইকের কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। ফিলিপ মরিস নামে একটি তামাক কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপনে দাবি করে, চিকিত্সকরা নিশ্চিত করেছেন গলায় জটিলতা ভোগাদের ফিলিপ মরিস ব্র্যান্ডের সিগারেট দেয়ার পর তাদের উন্নতি হয়েছে।

এ ধরনের কয়েকটি ধারাবাহিক বিজ্ঞাপন ফিলিপ মরিস ব্র্যান্ডের সিগারেটকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায়। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বের এক নম্বর ব্র্যান্ডের তকমা পায় ফিলিপ মরিস সিগারেট।

আরজে রেনল্ডস কোম্পানির ক্যামেলস ব্র্যান্ডের সিগারেটের জন্য অনেক চিকিৎসক প্রচার চালিয়েছেন।

টাইম টু লেডিস হোম জার্নাল থেকে ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এই বিজ্ঞাপনগুলোয় দাবি করা হয়, দেশজুড়ে চালানো জরিপে দেখা গেছে, চিকিৎসকদের পছন্দের ব্র্যান্ড ক্যামেলস। বিজ্ঞাপনের যে ছবিটি ব্যবহার হতো, তাতে দেখা যেত একজন চিকিৎসক তার চেম্বারে বসে রোগীর সঙ্গে কথা বলছেন।

চিকিত্সকরা সিগারেট এবং তামাকজাত দ্রব্যের আসক্তি থেকে মুক্ত ছিলেন না, বিষয়টা তামাক কোম্পানিগুলো ভালো করেই জানত। ধূমপানের সঙ্গে রোগের সম্পর্ক আছে এই তত্ত্বের চেয়ে কিছু চিকিৎসক বিশ্বাস করতেন, নির্দিষ্ট (জটিল রোগে আক্রান্ত) ব্যক্তির স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সিগারেট।

তামাক কোম্পানিগুলো তখন চিকিৎসকদের আহ্বান জানায়, মাত্রাতিরিক্ত ধূমপায়ী রোগীদের স্বাস্থ্যকর ব্র্যান্ডের সিগারেট টানার পরামর্শ দেয়ার। চিকিৎসকরাও তা-ই করতেন।

১৯৪০-এর দশকের শেষ দিকে এবং ১৯৫০-এর দশকের শুরুর দিকে বিজ্ঞাপনগুলোয় বদল আসতে শুরু করে। ক্যানেলস ব্র্যান্ড তাদের বিজ্ঞাপনে লিখতে শুরু করে, ‘নিজের ইচ্ছায় গ্রহণ করুন।’

তাদের আরেকটি বিজ্ঞাপনে লেখা হয়, ‘স্বাদ সত্যিই মজার! প্রতিটি ক্যানেলসের (সিগারেট) স্বাদ এত ভালো এবং মৃদু। এ জন্য চিকিৎসকের অনুমতির প্রয়োজন নেই!’

বিজ্ঞানের উন্নয়নে এসব ভাঁওতাবাজি দূর হয়েছে। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝিতে গবেষকরা জানান, তামাকজাত দ্রব্য এবং ফুসফুসের ক্যানসারের মধ্যে একটি সংযোগ রয়েছে। এটি জনমনে উদ্বেগ তৈরি করে। এই সময়ে সিগারেটের বিজ্ঞাপন থেকে হারিয়ে যেতে থাকে চিকিৎসকের উপস্থিতি।

টেলিভিশন ও রেডিওতে তামাকের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হয়েছিল ১৯৭১ সালে। ১৯৯৮ সালে মাস্টার সেটেলমেন্ট চুক্তিতে অন্যান্য ধরনের তামাকের বিজ্ঞাপন সীমিত করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর