ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের লক্ষ্য পরিবর্তন করেছে মস্কো। রাজধানী কিয়েভ থেকে সরে গিয়ে মারিওপোল ও দোনবাসে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে রুশ সেনারা। প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে ইউক্রেনীয় সেনারাও। এরই মধ্যে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বন্দরনগরী মারিওপোল এখন তাদের দখলে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া।
এমন পরিস্থিতিতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছে।
বাইডেনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ইউক্রেনকে আরও ৮০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্রসহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে কামান, গোলাবারুদ, কৌশলগত ড্রোন থাকবে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, এই সমরাস্ত্র সরাসরি ‘মুক্তির সম্মুখ সমরে’ পাঠানো হবে।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তার বাহিনীকে মারিওপোলের অ্যাজোভস্টাল স্টিল কারখানায় অভিযান স্থগিত করতে বলেছেন। এর পরিবর্তে কারখানা এলাকায় এমনভাবে অবরোধ করতে বলেছেন, যাতে একটা মাছিও না পালাতে পারে।
এ স্টিল কারখানায় আটকে পড়া সেনারা রাশিয়ার বেঁধে দেয়া আত্মসমপর্ণের সময়সীমা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে রাশিয়া সফলভাবে সারমাট নামের আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষা করেছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন এ ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে গর্ব করে বলেন, ‘সারমাট মস্কোর বিরুদ্ধে শত্রুদের দুইবার ভাবতে বাধ্য করবে।
নতুন (ক্ষেপণাস্ত্রের) সর্বোচ্চ কৌশলগত এবং প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিক্রম করতে সক্ষম।
রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমের প্লেসেটস্ক থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, যা সফলভাবে দেশটির পূর্বের কামচাটকা উপদ্বীপে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। টেলিভিশনে পুতিন পরীক্ষাটি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
পুতিন টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে সেনাদের উদ্দেশে বলেন, ‘সারমাট আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণের জন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই।
‘সত্যিই এই অনন্য অস্ত্র আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ সক্ষমতাকে বাড়াবে, বাইরের হুমকি থেকে রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং যারা আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে আমাদের দেশকে হুমকি দেয়ার চেষ্টা করে তাদের দুবার ভাবতে বাধ্য করবে।’
ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের তথ্যানুসারে, রাশিয়া আশা করছে, তাদের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র সারমাটে ১০টি বা তারও বেশি ওয়ারহেড মোতায়েন করতে পারবে।
রাশিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে কয়েক বছর ধরে কাজ করছে, তাই এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, পশ্চিমের জন্য বিস্মিত হওয়ার মতো কোনো ঘটনা নয়। তবে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চলাকালীন এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে।
পুতিন জানিয়েছেন, ‘নতুন (ক্ষেপণাস্ত্রের) সর্বোচ্চ কৌশলগত এবং প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিক্রম করতে সক্ষম।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, মস্কো ২০১১ সালের স্টার্ট চুক্তির অধীনে তার বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে ওয়াশিংটনকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে অবহিত করেছে। পরীক্ষা নিয়মিত, এখানে আশ্চর্যজনক কিছু ছিল না।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে যাতে কোনো উত্তেজনা তৈরি না হয়, তাই ২ মার্চ মিনিটম্যান-৩ নামের আইসিবিএমের একটি নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলছেন, পুতিন যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা সাধারণত কোনো দায়িত্বশীল পারমাণবিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশা করা হয় না।