ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে উপহার হিসেবে পাওয়া একটি হার বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ইমরান এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও তাকে দেয়া উপহারের তালিকা প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট।
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে নেয়া পাকিস্তান তথ্য কমিশনের (পিআইসি) আদেশের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট বুধবার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ কায়ানিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
পিআইসি আদেশ বাস্তবায়ন চেয়ে একজন নাগরিকের করা পিটিশন এবং সেই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের করা পিটিশনের শুনানি হয় বুধবার।
বিচারক মিয়াঙ্গুল হাসান আওরঙ্গজেব এই বিষয়ে দুটি পিটিশনের শুনানিকালে উপহারের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেন।
আইন অনুযায়ী, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপহার পেলে সেটা রাষ্ট্রীয় উপহারভান্ডার তোশাখানায় জমা দিতে হয়। যদি তারা সেই উপহার তোশাখানায় জমা না দেন অথবা অন্তত উপহারের অর্ধেক মূল্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারে না দেন, তাহলে সেটা বেআইনি কর্মকাণ্ড বলে গণ্য করা হবে।
গত বছর পাকিস্তান তথ্য কমিশন এই বিষয়ে একটি আবেদন গ্রহণ করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে তারা নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান এবং অন্যান্য বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে যেসব উপহার পেয়েছেন তার তথ্য দিতে। সেইসঙ্গে ইমরানের কাছে রাখা উপহার সম্পর্কে তথ্য এবং কোন নিয়মের অধীনে তিনি সেগুলো তার কাছে রেখেছেন সে বিষয়েও জানাতে বলা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য জানাতে বলা হয়। সেইসঙ্গে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও উপহারে তালিকাটি আপলোড করতে বলা হয়।
পরে তথ্য কমিশনের আদেশকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তারা দাবি করে, তথ্য কমিশনের এই আদেশ অবৈধ ও আইনসম্মত নয়।
তখন তৎকালীন সরকার বলেছিল, রাষ্ট্রের তোশাখানা সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে বিপন্ন করে।
বুধবারের শুনানির সময় বিচারক আওরঙ্গজেব পর্যবেক্ষণে বলেছেন, উপহারগুলো প্রধানমন্ত্রীর অফিসের এবং এগুলো বাড়িতে নেয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, ‘মানুষ আসে-যায় কিন্তু (প্রধানমন্ত্রীর) কার্যালয় রয়ে যায়। অর্থ যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে দেয়া হয় এবং উপহারটি (প্রধানমন্ত্রীর কাছে) রাখা হয় তবে এটি বড় কথা নয়।’
তিনি বলেন, ‘যা কিছু উপহার দেয়া হয় নিয়ম অনুযায়ী তা তোশাখানায় জমা হয়।’
উপহারের তালিকা প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে একটি চেয়ার উপহার দিয়েছিল যা একটি জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছিল।’
যখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরকারের কাছ থেকে নির্দেশনা পেতে আদালতের কাছে সময় চান। তখন বিচারক আওরঙ্গজেব বলেছেন, তিনি সেই সময় নিতে পারেন তবে এর মধ্যে পিআইসির আদেশ কার্যকর করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘তথ্য কমিশন যদি নাগরিককে (যারা আবেদন করেছেন) তথ্য সরবরাহ করার নির্দেশ দেয়, তবে তা করুন। যদি কেউ বিদেশ থেকে প্রাপ্ত উপহার তাদের বাড়িতে নিয়ে যায় তবে তা ফিরিয়ে নিন।’
সম্প্রতি পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ অভিযোগ তোলেন, ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে উপহার হিসেবে দামি একটি হার পেয়েছিলেন। বিশেষ সহকারীর মাধ্যমে ১৮ কোটি পাকিস্তানি রুপিতে হারটি বিক্রি করেন।
এই অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, তোশাখানার পুরস্কার তিনি কিনে নিয়েছিলেন সেই রেকর্ড আছে। তিনি দুর্নীতি করেছেন কারও কাছে প্রমাণ থাকলে তাদের উচিত সামনে আনা।