ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। ইউক্রেনের দাবি, এরই মধ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রুশ সেনাদের। ইউক্রেনের দাবিকে উড়িয়ে দিলেও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে। এমন পরিস্থিতিতেও যুদ্ধ থামানোর কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না রাশিয়া।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের সাবেক রাশিয়াবিষয়ক উপদেষ্টা ফিওনা হিলের মতে, ‘ইউক্রেনের পূর্ব ফ্রন্টে রাশিয়া যখন আক্রমণ শুরু করেছে, এতেই স্পষ্ট হয় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সমঝোতায় আগ্রহী নন।’
রেডিও ফোরকে দেয়া এক বক্তব্যে ফিওনা হিল বলেন, ‘পুতিন আসলে দেখতে চাচ্ছেন একটি সত্যিকার আপসের আগে যুদ্ধক্ষেত্রে কতটুকু অর্জন করা যায়।’
অর্থাৎ সমঝোতার আগে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের একটি ভালো অবস্থানে দেখতে চান পুতিন।
ফিওনা বলেন, ‘আপসের ক্ষেত্রে যেকোনো সাফল্য বা অগ্রগতির সম্ভাবনা এখন খুবই ক্ষীণ, যতক্ষণ না রুশ বাহিনীর অভিযানকে প্রতিহত করা যায় এবং তারা যাতে মনে করে, তাদের পক্ষে আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’
শুধু যুদ্ধ নিয়েই নয়, এ ছাড়া রেডিও সাক্ষাৎকারে নারী কর্মকর্তাদের বিষয়েও ক্রেমলিনের চিন্তাভাবনার বিষয়েও কথা বলেছেন ফিওনা।
তিনি বলেন, ‘ভ্লাদিমির পুতিন ও তার আশপাশের লোকেরা সত্যিকার অর্থেই মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিনিধিদলে নারী থাকে, তার মানে আমরা তাকে দুর্বল কিংবা অসম্মান করার চেষ্টা করছি।’
‘ক্রেমলিনে নারীরা অবশ্যই আছেন, তবে বিশেষ অবস্থানে নেই।’
এদিকে কিয়েভ থেকে সরে এসে রুশ সেনারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধ শুরু করেছে। ইউক্রেনও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ছে।
পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধ নিয়ে এরই মধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘সেখানে যতই রুশ সেনা থাক না কেন, আমরা লড়াই করব। আমরা নিজেদের রক্ষা করব।’
জেলেনস্কি ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বিশেষ করে যারা দোনবাস ও মারিওপোলের মতো কঠিন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যুদ্ধ করছেন।
সোমবার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক টুইট বার্তায় রুশ বাহিনীকে গণহত্যাকারী বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, তারা পূর্ব ইউক্রেনে আমাদের বাহিনীর দিকে মনোনিবেশ করেছে।
আপসের ক্ষেত্রে যেকোনো সাফল্য বা অগ্রগতির সম্ভাবনা এখন খুবই ক্ষীণ, যতক্ষণ না রুশ বাহিনীর অভিযানকে প্রতিহত করা যায় এবং তারা যাতে মনে করে, তাদের পক্ষে আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
সেই টুইটে আরও বলা হয়েছে, ‘রকেট হামলা, বোমা হামলা এবং ব্যাপক আর্টিলারির গোলাগুলি চলছে। আকাশ থেকে বোমা ফেলে মারিওপোলকে ধ্বংস করা হচ্ছে। আমাদের সেনারা শত্রুকে আঘাত করছে ও আঘাত করতে থাকবে।’
এই মাসের শুরুতেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও চেরনিহিভেড় আশপাশ থেকে রুশ বাহিনী সরিয়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। তুরস্কে শান্তি আলোচনার পর রাজধানী থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ মনে হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন দাবি করেছিল, দোনবাস এলাকাকে লক্ষ্য করে রুশ সেনারা এই পদক্ষেপ নিয়েছিল।
এদিকে রুশ বাহিনী মারিওপোল দখলের দাবি করলেও দোনবাস অঞ্চল নিয়ে বিস্তারিত কোনো কিছু বলেনি। তবে কৃষ্ণসাগর ফ্লিটের প্রধান জাহাজ মস্কভাডুবির পর পুরো ইউক্রেনেই হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।