প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা হয়েছে ইউক্রেন অভিযানে রুশ নৌবাহিনীর শক্তিমত্তার প্রতীক ডুবে যাওয়া যুদ্ধজাহাজ মস্কভার নাবিকদের ছবি।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই ছবি প্রকাশ করেছে বলে রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণসাগরে ডুবে যায় মস্কভা। এরপর থেকেই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এসেছে রাশিয়া আর ইউক্রেনের পক্ষ থেকে।
রাশিয়া বলেছে, জাহাজটিতে আগুন লাগলে তীরের দিকে টেনে নেয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। ইউক্রেন বলছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে জাহাজটি ডুবিয়ে দিয়েছে তারা।
জাহাজডুবির পর রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ক্রিমিয়ার বন্দর সেভাস্তোপলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নাবিকদের। রণতরিতে থাকা ৫১০ ক্রু ও মেরিন সেনারা নিরাপদে আছেন।
তবে এবারই দেশটির পক্ষ থেকে নাবিকদের বেঁচে থাকার প্রমাণ দিয়ে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হলো। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, অ্যাডএম ইয়েভমেনভ এবং অন্য দুই কর্মকর্তা প্রায় ১০০ নাবিকের সামনে একটি প্যারেড গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে এই ছবিটি কবেকার তা স্পষ্ট নয়।
ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি রুশ নৌবাহিনীও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
ইউক্রেনের দাবি, তাদের দুটি নেপচুন অ্যান্টি-শিপ মিসাইল মস্কোভাতে আঘাত হেনেছে।
ইউক্রেনের শহর মারিওপোল অবরোধের ক্ষেত্রে কৃষ্ণসাগরে মোতায়েন রাশিয়ার ফ্লিটের প্রধান যুদ্ধজাহাজ মস্কভা এর আগে সিরিয়া সংকটের সময়ও ভূমধ্যসাগরে টহল দেয়।
১২ হাজার ৫০০ টন ওজনের মস্কভা মিসাইল ক্রুসার শ্রেণির একটি যুদ্ধজাহাজ। জাহাজবিধ্বংসী এবং ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সাজানো ছিল এটি।
১৯৭৯ সালে জাহাজটি তৈরি হলেও এর তিন বছর পর এটি সোভিয়েত নৌবাহিনীতে কমিশন পায়। কৃষ্ণসাগর ফ্লিটের এটিই ছিল ফ্ল্যাগশিপ। ১৮৬ মিটার লম্বা জাহাজটিতে ৬২ জন অফিসারসহ ৪৭৬ জন ক্রুয়ের থাকার ব্যবস্থা ছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর নব্বইয়ের দশকে যুদ্ধজাহাজটি মেরামত করে রাশিয়া। ১৯৯৯ সালে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতায় আসার পর সেটির নাম দেয়া হয় মস্কভা। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর সম্মানে জাহাজটির নাম রাখা হয়।
২০০৮ সালে রাশিয়া-জর্জিয়া যুদ্ধের সময় কৃষ্ণসাগরে অভিযান চালায় এই যুদ্ধজাহাজ। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলেও অংশ নেয় এটি। এই যুদ্ধজাহাজ থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর স্নেক আইল্যান্ডে হামলা চালানো হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।