ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশ সেনা না পাঠালেও রাশিয়ার অভিযান শুরুর আগে থেকে প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র পাঠিয়ে আসছে ন্যাটো। সর্বশেষ ইউক্রেনে ট্যাংক ও এস-৩০০-এর মতো ভারী অস্ত্র পাঠালে বিষয়টিকে আর স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না ক্রেমলিন। এবার ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়ার বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করেছে রাশিয়া।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা কূটনৈতিক নোটের মাধ্যমে মস্কো থেকে এসেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে দুই পৃষ্ঠার একটি কূটনৈতিক নোট ওয়াশিংটনের রুশ দূতাবাস থেকে পাঠানো হয়েছে। সে নোটে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ইউক্রেন সংঘাতে অস্ত্র পাঠিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে, যা রাশিয়াকে ‘অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া’ দেখাতে বাধ্য করতে পারে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন করে ইউক্রেনে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সহায়তা অনুমোদন করে। যে সহায়তা প্যাকেজে প্রথমবারের মতো দীর্ঘপাল্লার কামান যুক্ত করা হয়, যা আক্রমণাত্মক অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত। বাইডেনের এই অনুমোদনের কয়েক ঘণ্টা পরই রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই সতর্কবার্তা এলো।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যার পরিমাণ প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোকেই নয়, রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে হামলা চালানোর জন্য সম্প্রতি ইউক্রেনকেও সতর্ক করেছে ক্রেমলিন। যদিও ইউক্রেন হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। পশ্চিমাদের ধারণা, ইউক্রেনে বড় ধরনের কোনো হামলার প্রেক্ষাপট তৈরির চেষ্টা করছে রাশিয়া।
এদিকে বৃহস্পতিবার আটলান্টায় জর্জিয়া টেক ইউনিভার্সিটিতে এক বক্তৃতার সময় সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন ও রাশিয়ার নেতৃত্বের সম্ভাব্য হতাশার ফলে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকিকে আমরা কেউই হাল্কাভাবে নিতে পারি না।
‘আমরা স্পষ্টতই খুবই উদ্বিগ্ন। আমি জানি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এড়ানোর বিষয় নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, যেখানে আপনি জানেন, পারমাণবিক সংঘাত সম্ভব।’
সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কিও রাশিয়ার সম্ভাব্য পারমাণবিক হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। বিশ্ববাসীকে এ বিষয়ে প্রস্তুত থাকা উচিত বলেও মনে করেন জেলেনস্কি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।