প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব তাদের ঋণদাতাদের অর্থ শোধ করা ‘অসম্ভব’ করে তুলেছে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এবারই প্রথম চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে পৌঁছানোয় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার। শ্রীলঙ্কাজুড়ে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপর্যস্ত জনজীবন। জ্বালানির তীব্র সংকট আরও খারাপ করেছে পরিস্থিতি।
এই সঙ্কট ঘিরে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ করে আসছে দেশটির জনগণ।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে একটি ঋণ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে দেশটির।
মঙ্গলবার দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহায়তার আগে বিদেশি সরকারের কাছ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না শ্রীলঙ্কা।
মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে তাদের ঋণখেলাপির কোনো রেকর্ড নেই।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি ঠেকাতে সরকার একেবারে শেষ অবলম্বন হিসেবে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।’
ঋণদাতারা তাদের বকেয়া যেকোনো পরিমাণ সুদ মূলধনের সঙ্গে যোগ করতে পারে অথবা শ্রীলঙ্কান রুপিতে পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে পারে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
গত কয়েক বছর শ্রীলঙ্কার রাজনীতি বেশ টালমাটাল ছিল। এই অবস্থায় দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। ২০২০ সালে শুরুর দুই মাসে রিজার্ভ ৭০ শতাংশ কমে যায়। ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে। শুধু তাই নয়, বছরের বাকি সময়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিতে হয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকারকে।
প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ মেটানোর জন্য রিজার্ভের ডলার বাঁচাতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় শ্রীলঙ্কা সরকার। এর পর থেকেই দেশটিতে সংকট বাড়তে থাকে। এসব সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতিকে দায়ী করছেন বিক্ষোভকারীরা।