গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। ইউক্রেনের দাবি, যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে রাশিয়া। রুশ সেনাদের হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকারও করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক শ ট্যাংক হারিয়েছে রুশ সেনারা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক বিশেষজ্ঞরা রাশিয়ার ব্যাপকসংখ্যক ট্যাংক হারানোর কারণ হিসেবে বলছেন, পশ্চিমারা ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং রাশিয়াও যুদ্ধক্ষেত্রে সঠিকভাবে ট্যাংক ব্যবহার করতে পারছে না।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, রাশিয়া এ পর্যন্ত ৬৮০টিরও বেশি ট্যাংক হারিয়েছে।
এদিকে মিলিটারি ও ইন্টেলিজেন্স ব্লগ ওরিস যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত ছবি যাচাই করে বলছে, রাশিয়া ৪৬০টির বেশি ট্যাংক ও ২ হাজারের বেশি সাঁজোয়া যান হারিয়েছে।
র্যান্ড করপোরেশন বলছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর সময় প্রায় ২ হাজার ৭০০ ট্যাংক যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে আসে।
ধারণা করা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যাপকসংখ্যক ট্যাংক হারানোর কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত জাভালিন ক্ষেপণাস্ত্র। জাভালিন ক্ষেপণাস্ত্রে দুটি বিস্ফোরক থাকে। আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম বিস্ফোরণে ট্যাংকের বিস্ফোরক প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধ্বংস হয় এবং পরের বিস্ফোরণে ট্যাংকই ধ্বংস হয়ে যায়। যুদ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেনকে ২ হাজার জাভালিন ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর আরও ২ হাজার জাভালিন ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হয়।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্যও তাদের নির্মিত ৩ হাজার ৬০০ এনলাও ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই সামরিক বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছিল খুব সহজেই রাশিয়ার বিমান বাহিনী ইউক্রেনের আকাশে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে। এমনটা আসলে ঘটেনি। ফলে রাশিয়ার অগ্রসরমান ট্যাংক বাহিনীকে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক জায়গাগুলোতে অবস্থান নিতে পেরেছিল ইউক্রেনীয় সেনারা।
যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার সরবরাহ ব্যবস্থায় দুর্বলতা দেখা গেছে। ফলে অনেক স্থানে ট্যাংক জ্বালানির অভাবেই অগ্রসর হতে পারেনি। এ ছাড়া বহু ট্যাংক ফেলে রেখেই রুশ সেনারা চলে যায়। কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, ইউক্রেনীয় সেনারা ট্রাকটর দিয়ে রুশ ট্যাংক টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।