নানা সংকটে শ্রীলঙ্কা এখন অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
এক বিশেষ বিবৃতিতে সোমবার সন্ধ্যায় তিনি এ মন্তব্য করেন বলে সিলন টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মাহিন্দা রাজাপাকসে বলেন, ‘করোনা মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচানো গেলেও এখন দেশটি গভীর অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হচ্ছে। চরম অস্থির পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা।’
পার্লামেন্টে থাকা সব রাজনৈতিক দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসার কথা বললেও কার্যত তারা কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে বলেন, ‘কেউ আসলে দায় নিচ্ছে না। তবু, ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আমরাই সব সমস্যার সমাধান করব। আমরা মানুষের কষ্ট বুঝতে পারি। জ্বালানির জন্য লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। গ্যাস কিনতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এসব কষ্ট আমরা বুঝতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘সরকার খুব কঠিন পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে সাহায্য চাইছে, তবে দেশের স্বাধীনতা রক্ষারও চেষ্টা করেছে। তাই আমরা জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শ্রীলঙ্কায় বড় বিনিয়োগ আনার সুযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
‘এই সরকার জনগণের সঙ্গে কাজ করার জন্য এবং শ্রীলঙ্কাকে একটি ঋণমুক্ত দেশ করার জন্য বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া কমিয়ে দিয়েছে।’
২০১৯ সাল থেকে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতায় আছেন ৭২ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। নানা কারণেই বেশ সংকটে পড়েছেন তিনি। সংকটে পড়েছে সরকার।
ব্রিটেনের কাছ থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এত বড় অর্থনৈতিক সংকট দেখেনি শ্রীলঙ্কা। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে পৌঁছানোয় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশ। শ্রীলঙ্কাজুড়ে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপর্যস্ত জনজীবন। জ্বালানির তীব্র সংকট আরও খারাপ করেছে পরিস্থিতি।
তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে জানিয়ে দিয়েছেন, পদত্যাগের পথে হাঁটবেন না তিনি। মুখ্য সরকারের হুইপ জনস্টন ফার্নান্দো বলেছেন, ‘দায়িত্ববান সরকার হিসেবে, যেকোনো পরিস্থিতিই তৈরি হোক না কেন, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করবেন না।’
গত কয়েক বছর শ্রীলঙ্কার রাজনীতি বেশ টালমাটাল ছিল। এই অবস্থায় দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। ২০২০ সালে শুরুর দুই মাসে রিজার্ভ ৭০ শতাংশ কমে যায়। ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে! শুধু তা-ই না, বছরের বাকি সময়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিতে হয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকারকে।
প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ মেটানোর জন্য রিজার্ভের ডলার বাঁচাতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এর পর থেকেই দেশটিতে সংকট বাড়তে থাকে। এসব সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতিকে দায়ী করছেন বিক্ষোভকারীরা।