ব্যবসা দিয়ে শুরু। এরপর ৩৪ বছরের রাজনীতি। তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী, এবার প্রধানমন্ত্রী। সহজে পরিচয় দিতে গেলে ব্যাপারটা এমনই। ইমরান খানকে হটিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন এই শাহবাজ শরিফ।
নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে কীভাবে তিনি দেশের সর্বোচ্চ পদে উঠে এসেছেন তারই বিস্তারিত বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
১৯৫০ সালে জন্ম নেয়া শাহবাজ ব্যবসায়ী মিয়া মোহাম্মদ শরিফের দ্বিতীয় ছেলে; সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রতিষ্ঠাতা নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই তিনি।
লাহোরের সরকারি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন শাহবাজ। ১৯৮৫ সালে লাহোর চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।
তবে মূলধারার রাজনীতিতে তার যাত্রা শুরু ১৯৮৮ সালে। ওই বছর তিনি পাঞ্জাব প্রাদেশিক পার্লামেন্টের (এমপিএ) সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া হয়।
সে বছরই পাকিস্তানের পার্লামেন্টের জাতীয় পরিষদে নির্বাচনে লড়ে পিএমএল-এনের সদস্য হন শাহবাজ। ১৯৯৩ সালে ফিরে আসেন পাঞ্জাব পরিষদে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন তিনি।
১৯৯৭ সালে নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়ে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহবাজ। ১৯৯৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানে সরকার উৎখাতের পর পরিবারসহ সৌদি আরবে নির্বাসনে যান। ২০০৭ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
২০০৮ সালে দেশে ফিরে আবার নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয়বারে মতো পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন শাহবাজ। পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৩ সালের নির্বাচনের পর তৃতীয়বারের মতো পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন এই নেতা।
২০১৮ সালের নির্বাচনে লড়ে আগস্ট থেকে দেশটির জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করছিলেন শাহবাজ শরিফ। দুর্নীতির অভিযোগে নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয় তাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় নানা ঘটনার প্রেক্ষাপটে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন তিনি। ২০১৯ সালে শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের কাছে তার মোট সম্পদের যে হিসাব দিয়েছেন, তাতে দেখা গেছে, তিনি ১০ কোটি রুপির বেশি অর্থের মালিক।
আর এসব তিনি আয় করেছেন হুদাবিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং, হামজা স্পিনিং মিলস এবং হুদাবিয়া পেপার মিলের বিনিয়োগের পাশাপাশি শেখুপুরা এবং লাহোরে কৃষি সম্পর্কিত বিনিয়োগ থেকে।
শনিবার মধ্যরাতে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ও দেশটির ২২তম প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পরদিন সোমবার পাকিস্তানের পার্লামেন্ট বা জাতীয় পরিষদে ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহবাজ।
সোমবার পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ বা সিনেটের চেয়ারম্যান সাদিক সানজারানির কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন তিনি। সাবেক ব্যবসায়ী শাহবাজ এখন পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী।