পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়া ইমরান খানের মনোনীত প্রার্থী শাহ মাহমুদ কুরেশি। এই সিদ্ধান্তের পরপর পার্লামেন্ট ছেড়ে চলে যান পিটিআই সদস্যরা। এর আগে দলের সব এমপিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন পিটিআই প্রধান।
ইমরানের নিজ দলের পাশাপাশি জোটসঙ্গীরা বিরোধী দলে যোগ দেয়ায় বিপাকে ছিল পিটিআই। শেষ মুহূর্তে তারা ওয়াক আউট করলে মুসলিম লীগের (এন) শাহবাজ শরিফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
- আরও পড়ুন: দলের সবাইকে নিয়ে পদত্যাগ করছেন ইমরান
পার্লামেন্ট সদস্য আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে শনিবার সকালে অধিবেশন শুরু হয়। ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির সভাপতিত্বে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও নাত পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা।
দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে নানা নাটকীয়তার পর শনিবার অনাস্থা ভোটে পদ হারান ইমরান খান। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করে অনুষ্ঠিত হয় অনাস্থা ভোট, যা এড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ৬৯ বছরের ইমরান।
প্রেক্ষাপট
গত ৩ এপ্রিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করে দেন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এরপর ইমরান খানের পরামর্শ মেনে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এদিন জানান, ডেপুটি স্পিকারের সিদ্ধান্ত সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের স্পষ্ট লঙ্ঘন। পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার বিষয়টি দেশের শীর্ষ আদালতের আদেশের অধীন। এ বিষয়ে আদালতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) এক নোটিশের ওপর শুনানি শুরু হয় রোববারই।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশ শাসনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে গত ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকার আসাদ কায়সারের প্রতি লিখিত আবেদন জানান তারা।
- আরও পড়ুন: ইমরান খানের চেয়ার টলছে
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, লিখিত আবেদন জমার ১৪ দিনের মধ্যে স্পিকারকে আলোচনার জন্য অধিবেশন ডাকতে হবে। সে অনুযায়ী ২২ মার্চের মধ্যে অধিবেশন আয়োজন করার কথা ছিল। তবে ২২ মার্চ থেকে জাতীয় পরিষদে ওআইসির দুই দিনব্যাপী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হওয়ায় তা আর হয়নি। এর পরই অধিবেশনের তারিখ পেছায়।
বিরোধী পক্ষ গত ৩ এপ্রিল জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পর ষড়যন্ত্রের কারণে এই প্রস্তাব তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কাশিম সুরি। পরে অধিবেশন মুলতবি করেন তিনি। বিরোধী দলগুলোর তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে। স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা। হট্টগোল তৈরি হয়।
অনাস্থা প্রস্তাবে টিকে থাকতে হলে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ইমরান খানকে অন্তত ১৭২ সদস্যের সমর্থন পেতে হতো। এরই মধ্যে তিন জোটসঙ্গী মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি), পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদ (পিএমএল-কিউ) এবং বালুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) বিরোধী শিবিরে যোগ দেয়ার ইঙ্গিত দেয়ায় ব্যাপারটি অন্যদিকে মোড় নেয়।
এর আগে তিন বছরের মাথায় গত মার্চে অনাস্থা ভোট হয় ইমরানের বিরুদ্ধে। সেবার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় অনায়াসেই উতরে গিয়েছিলেন তিনি।
- আরও পড়ুন: পাকিস্তানের ‘মুকুটে’ নতুন পালক ইমরান খান
দুর্নীতির দায়ে নওয়াজ শরিফ অভিশংসিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে চার দলের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেন তারকা ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খান। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত তার নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সরকারের মেয়াদ ছিল।