বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাকিস্তানে সাংবিধানিক ক্যুতে পদ হারালেন ইমরান

  •    
  • ১১ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:৫০

সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতবিরোধ লক্ষ্য করা গেলেও এবং ক্ষমতা হারানোর পরেও এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে কোন দায় দেননি ইমরান খান। তবে ইমরানের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতবিরোধ থাকলেও ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইমরানের অভিযোগ, তার বিরুদ্ধে চক্রান্তের মূল কলকাঠি নেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এ কথা অজানা নয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বরাবরই উষ্ণ।

পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তেই পদ হারিয়েছেন ইমরান খান। দৃশ্যত সাংবিধানিক পদ্ধতিতে ইমরানের পদচ্যুতি হলেও এর পেছনে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। যদিও ইমরানবিরোধীরা এতদিন বলে এসেছিল, সেনাবাহিনীর জোরেই ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান খান।

ইমরানের দাবি, পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার সূত্রপাত তার রাশিয়া সফরের মধ্য দিয়ে। সফরটি ছিল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিবিষয়ক।

পশ্চিমা দেশগুলো যখন ইউক্রেন আক্রমণের কারণে একের পর এক অবরোধ আরোপ করছিল রাশিয়ার ওপর, তখন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পাকিস্তানের ওপরও একটি প্রচ্ছন্ন চাপ ছিল রাশিয়ার ওপর ব্যবস্থা নেয়ার।

কিন্তু ইমরান খান রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো দেশটিতে দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে যান। যদিও সে সফরে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি। কিন্তু ইমরান খানের রাশিয়া সফর ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি করার ঘোষণাকে পশ্চিমারা ভালো চোখে দেখেনি তা স্পষ্ট।

সমাবেশে কথিত চিঠি হাতে ইমরান খান। ছবি: সামা নিউজ

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যা বলছেন ইমরান খান

রাশিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির বিষয়ে ইমরান খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের দূতকে বলেছে, এমন পরিস্থিতি কেবল ইমরান খানের জন্য হয়েছে। ইমরান খান ক্ষমতায় থাকলে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হতে পারে না।

ইমরান আরও বলেছিলেন, তারা আসলে যা বলছে তা হলো, ইমরান খানের স্থলাভিষিক্ত যে হবেন তার সঙ্গে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা নেই।

এক বিবৃতিতে ইমরান খান ওই কূটনীতিকের নাম উল্লেখ করেন। পাকিস্তানের তখনকার রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ খানের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর ওই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ইসলামাবাদের মসনদ থেকে ইমরান খানকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে সরাসরি বার্তা দেন।

তবে ক্ষমতা থেকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের যোগসাজশ রয়েছে- এমন দাবি রোববার পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছে হোয়াইট হাউস।

সেনাবাহিনীর প্রধান কামার বাজওয়ার সঙ্গে ইমরান খান। ছবি: হিন্দুস্তান টাইমস

ইমরান খান ও সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সব সময় উষ্ণ। প্রধানমন্ত্রী ইমরানের রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান যে দেশটির সেনাবাহিনীর অবস্থান নয়, ইমরান খানের পদচ্যুতির আগে তাও স্পষ্ট করা হয়েছিল সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে ট্র্যাজেডি হিসেবে অভিহিত করে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া। তার এই আহ্বানে রাশিয়া ইস্যুতে ইমরান খানের অবস্থান ও দেশটির সেনাবাহিনীর অবস্থান যে এক নয়, তা স্পষ্ট হয়।

যখন ইমরান খান বারবার বলছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চক্রান্তে লিপ্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে কামার জাভেদ রাজওয়া বলছিলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছিলেন, ‘দেশটির সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ ও দুর্দান্ত কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের অন্যতম বড় রপ্তানি বাজার। বিরোধে না জড়িয়েই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী পাকিস্তান।’

পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সেনা অভিযান এবং নাইন/ইলেভেনের পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃশ্যত অন্তহীন যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন ইমরান। এ নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতদ্বৈততা তৈরি হয় তার।

এ বিষয়ে জেনারেল আব্বাস বলেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান) অবস্থান ছিল, আমরা আমেরিকার যুদ্ধ বয়ে বেড়াচ্ছি এবং জানমালের ক্ষতি করছি। সেনাবাহিনীর মত ছিল, এটা (সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান) আফগান যুদ্ধের কুফল এবং আমাদের হাতে অন্য কোনো সুযোগ ছিল না।’

গত বছরের অক্টোবরে বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে সামরিক কর্মকর্তাদের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার বিস্ফোরণ ঘটে। সে সময় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার বাজওয়ার পছন্দের ব্যক্তির পরিবর্তে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদকে সামরিক গোয়েন্দাপ্রধান হিসেবে রাখতে চেয়েছিলেন ইমরান।

ঘটনাক্রমে বাজওয়ার মনোনীত লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আনজুম আন্তবাহিনী গোয়েন্দা (আইএসআই) প্রধান হিসেবে নিযোগ পান, কিন্তু এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বিরোধ অশুভ ইঙ্গিত দিচ্ছিল।

সেনাবাহিনীকে দায়ী করেননি ইমরান

ইমরানের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর এই মুখোমুখি অবস্থান ও দলের অভ্যন্তরে চক্রান্তকারীদের বিচরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করলেও দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যত তিনি কিছু বলেননি। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে সেনাবাহিনীকে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গেছে।

দেশটির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো প্রধানমন্ত্রীকে মেয়াদ পূর্ণ করতে দেখা যায়নি। প্রত্যেকটি পদচ্যুতিতেই সেনাবাহিনীর প্রচ্ছন্ন ভূমিকা ছিল। এমনকি ইমরান খান নিজেও ছিলেন, নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে পারভেজ মোশাররফের সামরিক অভ্যুত্থানের একজন সমর্থক।

তবে ইমরান খান এক জনসভার ভাষণে সম্প্রতি বলেছিলেন, জুলফিকার আলী ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রী পদ হারাতে হয় ও তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, কারণ তিনি পাকিস্তানের জন্য স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির স্বপ্ন দেখেছিলেন।

জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউল হক।

ইমরানের পক্ষে রাজপথে বিক্ষোভকারীরা

যেভাবে ক্ষমতা হারান ইমরান

শুরুতে পার্লামেন্টে মিত্রদের সমর্থন হারানোয় ইমরানের পক্ষের আইনপ্রণেতা কমে যায়। ইমরান খানের অভিযোগ, নিজ জোটের আইনপ্রণেতাদের ইমরানবিরোধী অবস্থান, চক্তান্তেরই অংশ।

৩৪২ সদস্যের জাতীয় পরিষদে বিএপি, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) এবং পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদের (পিএমএল-কিউ) আসনসংখ্যা ৫ শতাংশের কম, তবে অনাস্থা ভোটে জোটের এ সঙ্গীদের ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার সাড়ে তিন বছরের অধ্যায় শেষ হয়ে যায়।

শুধু জোটের মিত্র নয়, খোদ পিটিআইয়ের বিদ্রোহী কিছু আইনপ্রণেতার সমর্থন পাওয়ার কথাও জানায় বিরোধী দলগুলো।

স্থানীয় সময় শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভারপ্রাপ্ত স্পিকার আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। এতে ৩৪২ আইনপ্রণেতার মধ্যে অন্তত ১৭২ জনের সমর্থন প্রয়োজন ছিল বিরোধীদের।

১৭৪ ভোট পেয়ে তাদের অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়। ফলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। এ বিষয়টিকে দেখা হচ্ছে সংবিধানসম্মতভাবে ইমরান খানের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক অভ্যুত্থান (ক্যু) হিসবে দেখছে সংবাদমাধ্যম।

পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ইমরানের ভোটে হারার খবর আসার পরই পক্ষে-বিপক্ষে মত দিতে থাকেন অনেকেই। কেউ বলছেন, নতুন ভোরের সূচনা হলো। আবার কেউ বলছেন, পাকিস্তানের জন্য এই দিনটি বিষাদময় একটি দিন।

এ বিভাগের আরো খবর