অর্থনৈতিক সংকটে সৃষ্ট অস্থিরতায় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানী কলম্বোয়।
স্থানীয় সময় শনিবার কলম্বোর ওয়াটারফ্রন্টের গালে ফেস গ্রিনে এই বিক্ষোভে অংশ নেয় হাজারো মানুষ। উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। প্রত্যেকের একই দাবি- রাজাপাকসে ও তার পরিবারের কোনো সদস্য যেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থাকেন।
আল জাজিরা বলছে, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবিতে করা এই বিক্ষোভে অংশ নেয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিনেতা, আইনজীবী, স্থপতিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আন্দোলনকারীদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা প্রথমবারের মতো এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় নেমে এসেছেন। তীব্র রোদের মধ্যে অংশ নেয়া বিক্ষোভকারীরা রাজাপাকসেকে নিয়ে নানা স্লোগান দেন। কেউ বলেন, ‘পাগল মানুষ রাজাপাকসে’, কেউ বলেন, ‘বাড়ি যাও গোতা’। অনেকেই এসেছিলেন জাতীয় পতাকা হাতে।
দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতাদের হাতে শ্রীলঙ্কা আর নয়- বলেও স্লোগান দিতে থাকেন কেউ কেউ। বুদ্ধি করুণাত্নে নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, এখন আমাদের ’করো অথবা মরো’র মতো পরিস্থিতি।
২০১৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন ৭২ বছর বয়সী রাজাপাকসে। নানা কারণেই বেশ সংকটে পড়েছেন তিনি। ব্রিটেনের কাছ থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এত বড় অর্থনৈতিক সংকট দেখেনি শ্রীলঙ্কা।
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে পৌঁছানোয় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার। শ্রীলঙ্কাজুড়ে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপর্যস্ত জনজীবন। জ্বালানির তীব্র সংকট আরও খারাপ করেছে পরিস্থিতি।
তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে জানিয়ে দিয়েছেন, পদত্যাগের পথে হাঁটবেন না তিনি। মুখ্য সরকারের হুইপ জনস্টন ফার্নান্দো বলেছেন, ‘দায়িত্ববান সরকার হিসেবে, যেকোনো পরিস্থিতিই তৈরি হোক না কেন, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করবেন না।’
গত কয়েক বছর শ্রীলঙ্কার রাজনীতি বেশ টালমাটাল ছিল। এই অবস্থায় দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। ২০২০ সালে শুরুর দুই মাসে রিজার্ভ ৭০ শতাংশ কমে যায়। ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে! শুধু তা-ই না, বছরের বাকি সময়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিতে হয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকারকে।
প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ মেটানোর জন্য রিজার্ভের ডলার বাঁচাতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় শ্রীলঙ্কা সরকার। এর পর থেকেই দেশটিতে সংকট বাড়তে থাকে। এসব সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতিকে দায়ী করছেন বিক্ষোভকারীরা।