পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে হেরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানো ইমরান খানের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হবার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ।
ভোটের ফল প্রকাশের পরপরই পার্লামেন্টে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘এক নতুন ভোর শুরু হয়েছে। এই জোট নতুন পাকিস্তান বিনির্মাণ করবে।’
রয়টার্সের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে ডেকান হেরাল্ড।
দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য নাম মনোনীত করতে রোববার দুপুরেই জাতীয় পরিষদে অধিবেশন আহ্বান করার সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবারই নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নিতে পারে ২২ কোটি জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তান।
দেশের বাইরে খুব কম পরিচিত এই শাহবাজ শরিফ একজন রাজনীতিবিদ পরিচয়ের চেয়ে দক্ষ প্রশাসক হিসেবে সুপরিচিত। তিনি পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনবার। ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে দেশটির জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করে আসছেন শাহবাজ শরিফ।
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই ৭০ বছর বয়সী শাহবাজ শরিফ পার্লামেন্টে ইমরানবিরোধী অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব উত্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন, নওয়াজ শরিফের সঙ্গে শাহবাজ শরিফের তফাত হলো তিনি সামরিক বাহিনীর সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সফল।
স্বাধীন দেশ হিসেবে পাকিস্তানের জন্মলাভের পর থেকেই দেশটির রাজনৈতিক পালাবদলের নেপথ্যে রয়েছে সামরিক বাহিনী। এই সশস্ত্র বাহিনী পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক সব বিষয়াদির নিয়ন্ত্রক হয়ে আছে।
দেশটির শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সরাসরি মদদে তিনটি বেসামরিক সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। এবং কোনো প্রধানমন্ত্রীই নির্ধারিত পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
কে এই শাহবাজ শরিফ
২০১৮ সালের আগস্ট থেকে দেশটির জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করে আসছেন শাহবাজ শরিফ।
তিনি পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনবার। এখন পর্যন্ত এই প্রদেশে সবচেয়ে বেশি সময় মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন শাহবাজ।
দেশটির অন্যতম বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নেওয়াজ-এর (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন শাহবাজ নেওয়াজ। তিনি পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৮৮ সালে।
তিনি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন ১৯৯৭ সালে।
১৯৯৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানে সরকার উৎখাতের পর পরিবারসহ সৌদি আরবে নির্বাসনে যান শাহবাজ শরিফ। ২০০৭ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
দেশটির জাতীয় নির্বাচনে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন জয়লাভ করলে তার ভাই শাহবাজ শরিফ দ্বিতীয়বারের মতো পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
দুর্নীতির অভিযোগে নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর দলটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয় তার ভাই শাহবাজ শরিফকে।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ '৯৫-এর ১ ধারা অনুযায়ী, এই সংসদ ঘোষণা দিচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিয়াজির ওপর সংসদের কোনো আস্থা নেই। ফলে ৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।’