অশোভন আচরণের অভিযোগে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের দুই সদস্যকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম সিলন টুডের এক প্রতিবেদনে শুক্রবার এতথ্য জানানো হয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকটে সৃষ্ট অস্থিরতার মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা; দাবি উঠেছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের।
এরই মধ্যে নানা ঘটনা ঘটছে এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে। তবে পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন; প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি পদ ছাড়ছেন না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অশোভন আচরণের জন্য স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধন রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনার এমপি তিশা কুট্টিয়ারচ্চি ও সামাগী জনা বালাওয়েগয়ার এমপি চামিন্দা উইজেসিরিকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছেন।
বেশ কিছুদিন ধরে শ্রীলঙ্কায় অস্থিরতা চলছে। সব মিলিয়ে কঠোর সময় পার করছে দেশটি। মুখ্য সরকারের হুইপ জনস্টন ফার্নান্দো বলেছেন, ‘দায়িত্ববান সরকার হিসেবে, যেকোনো পরিস্থিতিই তৈরি হোক না কেন, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করবেন না।’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রাস্তায় আন্দোলন করছে সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে পুরো মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেছে। পুনরায় নিয়োগ পাওয়া চার মন্ত্রীর মধ্যে অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আলি সাবরিও এক দিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন।
চলমান সংকটের মধ্যেই নরওয়ে, ইরাক ও অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তবে দেশটির এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানা যায়নি। অন্তত ৪১ জন আইনপ্রণেতা জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের ক্ষমতাসীন জোট।
প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের একটি ঐক্য সরকারে যোগদানের আমন্ত্রণকে অযৌক্তিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধীরা। এর পরিবর্তে দেশের খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির জন্য সরকারের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশরাজের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে এই দেশ। তীব্র আন্দোলন সামাল দিতে একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয় সরকার। এর আগে দেশজুড়ে জারি হয় কারফিউ।
দুই কোটি জনসংখ্যার এই দেশটিতে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপর্যস্ত জনজীবন। আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি, দুর্বল সরকারি অর্থব্যবস্থা এবং করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি দেশটির এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।
লঙ্কান সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটনশিল্প ধসে পড়েছে, রেমিট্যান্স পৌঁছেছে তলানিতে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ নেমে এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারে।
বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে জ্বালানি আমদানি কমে যাওয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ এই সংকটে পড়ে দেশ। দিনের অর্ধেক বা এর বেশি সময় চলছে লোডশেডিং; খাবার, ওষুধ এবং জ্বালানিসংকটে ক্ষোভ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গত কয়েক বছর শ্রীলঙ্কার রাজনীতি বেশ টালমাটাল ছিল। এই অবস্থায় দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। ২০২০ সালে শুরুর দুই মাসে রিজার্ভ ৭০ শতাংশ কমে যায়।
ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে! শুধু তা-ই না, বছরের বাকি সময়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিতে হয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকারকে।
প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ মেটানোর জন্য রিজার্ভের ডলার বাঁচাতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় শ্রীলঙ্কা সরকার। এর পর থেকেই দেশটিতে সংকট বাড়তে থাকে।
এসব সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতিকে দায়ী করছেন বিক্ষোভকারীরা।