পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতায় চাপে পড়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এরই মধ্যে তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তানের অনেক নেতা-কর্মী দেশ ছেড়ে পালালেও সবার চোখ যেন একজন ব্যক্তির দিকেই। তিনি ফারাহ খান। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সহধর্মিণী বুশরা বিবির বান্ধবী।
ধারণা করা হচ্ছে, ইমরানকে বিপদে দেখে এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে দুবাই চলে গেছেন। তার স্বামীও সেখানেই রয়েছেন।
ফারাহর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর যত অভিযোগ
ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো ফারাহ খানকে নিয়ে জানাচ্ছে বিস্তর অভিযোগ। এরই মধ্যে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়ম নওয়াজ ফারাহ খানকে আখ্যা দিয়েছেন ‘সব কেলেঙ্কারির জননী’ হিসেবে।
ফারাহ কোনো সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই, এমনকি পিটিআইতে তার কোনো পদ নেই।
দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের কন্যা মরিয়ম নওয়াজ বলেন, ‘আমি ফারাহর নাম বলতে পারি, যিনি বুশরা বিবির বান্ধবী, কোটি কোটি রুপি তিনি বদলি বাণিজ্য করে কামিয়েছেন, যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বানিগালা (পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান)।’
ফারাহ খানের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হলো, তিনি অর্থ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি করতেন। শুধু বদলি বাণিজ্য করেই তিনি প্রায় ৬০০ কোটি রুপি উপার্জন করেছেন বলে অভিযোগ পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলোর।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টোও একাধিকবার ফারাহর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন।
পাকিস্তানের পদচ্যুত গভর্নর চৌধুরী সারওয়ার ও আলিম খান দুজনই একসময় ইমরান খানের বন্ধু ছিলেন। তারা দাবি করেছেন, পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী উসমান বাজদারের সহায়তায় বদলি বাণিজ্য করে ফারাহ খান মিলিয়ন ডলার কামিয়েছেন।
ফারাহর ব্যাগের দাম ১ কোটি ৬৬ লাখ রুপি
উড়োজাহাজে থাকা ফারাহ খানের যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে, সেখানে তার যেই হ্যান্ডব্যাগটি দেখা যাচ্ছে তার মূল্য ১ কোটি ৬৬ লাখ রুপি (৯০ হাজার ডলার), এমন দাবি করা একটি পোস্ট টুইটারে শেয়ার করেছেন পিএমএল-এনের নেতা ও পাকিস্তানের সাবেক অর্থমন্ত্রী মেফতা গিল।
যা বলছেন বুশরা ও ইমরান ঘনিষ্ঠরা
ইমরান খানের সৎছেলে মুসা মানেকা বলেছেন, ফারাহ খান যেসব কর্মকাণ্ড করেছেন, এর সঙ্গে তার পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই।
আমি ফারাহর নাম বলতে পারি, যিনি বুশরা বিবির বান্ধবী, কোটি কোটি রুপি তিনি বদলি বাণিজ্য করে কামিয়েছেন, যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বানিগালা।
তিনি বলেন, ‘ফারাহ খান বসবাসের জন্য দুবাই চলে গেছেন। তিনি ইমরান খান ও আমার মায়ের সঙ্গে ভুল করেছেন।’ এদিকে ফারাহ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাবে ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী শেহবাজ গিল বলেছিলেন, বিরোধীরা সমালোচনার কারণ খুঁজে না পাওয়ায় বুশরা বিবির বান্ধবী ফারাহকে টার্গেট করতে শুরু করেছেন।
শেহবাজ বলেছিলেন, ফারাহ কোনো সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই, এমনকি পিটিআইতে তার কোনো পদ নেই।
ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে লড়ছেন ইমরান
এর আগে প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে ইমরান খান জয়ী হবেন কি না, সে প্রশ্নে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ভোট ছিল রোববার।
অধিবেশনের শুরুতেই ওই প্রস্তাব খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাশিম সুরি। ব্যাপারটিকে তিনি আখ্যা দিয়েছেন ‘অসাংবিধানিক’ বলে। অধিবেশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী ইমরান উপস্থিত ছিলেন না।
পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী উসমান বাজদারের সহায়তায় বদলি বাণিজ্য করে ফারাহ খান মিলিয়ন ডলার কামিয়েছেন।
ষড়যন্ত্রের কারণে এই প্রস্তাব তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কাশিম সুরি। পরে অধিবেশন মুলতবি করেন তিনি। একপর্যায়ে বিরোধী দলগুলোর তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে। স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা। হট্টগোল তৈরি হয়।
এর আগে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগে সকালে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশ শাসনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে গত ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকার আসাদ কায়সারের প্রতি লিখিত আবেদন জানান তারা।