মধ্যপ্রাচ্যের একসময়ের সমৃদ্ধ দেশ লেবাননকে গত সোমবার দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী সাদেহ আল-শামি।
স্থানীয় চ্যানেল আল-জাদিদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শামি বলেন, ‘বাংকে দু লিবান (লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংক) এর সঙ্গে এই রাষ্ট্রটিও দেউলিয়া হয়ে গেছে। আর ক্ষতি যেহেতু হয়েই গেছে, আমরা চেষ্টা করব জনগণের ওপর থেকে এই ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনতে।’
তিনি জানান, যে ক্ষতি হয়েছে তা রাষ্ট্র ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক এবং আমানতকারীরা ভাগাভাগি করে নেবেন।
তিনি বলেন, ‘ক্ষতির এই ভাগাভাগি নিয়ে মতবিরোধের কোনো অবকাশ নেই।’
লেবাননের উপপ্রধানমন্ত্রীর দেশকে দেউলিয়া ঘোষণার মধ্যে দিয়ে যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে, আসলেই কি কোনো দেশ দেউলিয়া হতে পারে?
ইন্ডিয়া টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে’ প্রকৃত অর্থে এটি একটি ভুল দাবি। যখন একটি দেশ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তখন দেশটি মোটেও দেউলিয়া হয়ে যায় না, তখন দেশটি হয়ে যায় ঋণ খেলাপি।
এখন মনে হতে পারে যে একটি দেশ ঋণ খেলাপি হওয়া মানে খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা, আসলে এমন কিছুই নয়। বহু দেশই তাদের ইতিহাসে কোনো না কোনো সময় ঋণ খেলাপি হয়েছে এবং সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
ইউরোপের দেশ গ্রিস ১৮২৯ সালের পর থেকে অর্ধেকের বেশি সময় ঋণ খেলাপি ছিল। এমনকি আজ থেকে প্রায় ২ হাজার ৪০০ বছর আগেও গ্রিস ঋণ খেলাপি হয়েছিল। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার ঋণ খেলাপি দেশ স্পেন। অষ্টাদশ থেকে উনবিংশ শতাব্দিতে দেশটি প্রায় ১৫ বার ঋণ খেলাপি হয়েছে।
ক্ষতির এই ভাগাভাগি নিয়ে মতবিরোধের কোনো অবকাশ নেই।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সদস্য দেশগুলো ঋণ খেলাপি হওয়ার আগেই প্রায়শই সংস্থা থেকে বের হয়ে যেতে চায়। কারণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, সংস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়া দেশকে কেবল আর্থিক সম্পদেরই যোগান দেয় না, পরিস্থিতি মোকাবেলায় কারিগরি অভিজ্ঞতা দিয়েও সহায়তা দেয়।
২০১৯ সালের শেষ দিক থেকে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে লড়ছে লেবানন। এর মধ্যে চরম মাত্রায় মুদ্রার মান কমে যাওয়া ছাড়াও তেল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে সংকটের মধ্যে আছে দেশটি।
দেশটির মুদ্রার মান ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে গেছে। ফলে দৈনন্দিন সাধারণ চাহিদাগুলোও দেশটির জনগণ পূরণ করতে পারছিল না। খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো অধরা হয়ে যায় তাদের কাছে। জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ সরবরাহেও ধস নেমেছিল।
উপপ্রধানমন্ত্রী আল-শামি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করা যায় না। তাই ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের ব্যবস্থাটি সবার জন্য আর উন্মুক্ত রাখা যাচ্ছে না।’
সবশেষে তিনি বলেন, ‘আশা করি, সবকিছুই একদিন স্বাভাবিক হবে।’
সংকটের কারণে বিদেশি মুদ্রায় অর্থ উত্তোলন লেবাননে ২০১৯ সাল থেকেই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।