গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। দেশটির দাবি লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের বাসিন্দারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইউক্রেনকে অসামরিকায়ন ও নাৎসিমুক্তকরণের জন্যই এই সামরিক অভিযান। ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধে কোনো দেশ জড়ালে তাকে কঠোর পরিণতির বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল রাশিয়া। পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার হুমকিকে পরমাণু বোমা হামলার হুঁশিয়ারি হিসেবেই দেখছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন এরই মধ্যে দেশটির পরমাণু বাহিনীকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, পরমাণু সংঘাত একসময় অকল্পনীয় ভাবা হলেও তার এখন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
এ ছাড়া মার্চের শেষ দিকে হিরোশিমায় আমেরিকার প্রতিনিধিদের সফর উপলক্ষে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা দেশটির রাষ্ট্রীয় মাধ্যম এনএইচকেকে বলেছেন, রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি ‘অবিশ্বাস্যরকম বাস্তব’।
এ ছাড়া তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এরই মধ্যে দেখিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়া কতটা কঠিন। যখন রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা খুবই বাস্তব, এমন সময় হিরোশিয়াম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের প্রধান ইম্যানুয়েলের সফরের অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক মহলকে পারমাণবিক বাস্তবতা নিয়ে বিশ্ববাসীকে শক্ত বার্তা দেবে।
এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ আমেরিকান চিন্তিত, কারণ তাদের ধারণা ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান পরমাণু যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। এই ৭০ শতাংশ আমেরিকানের ধারণা, আমরা এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রয়েছি।
গবেষকদের অনুমান, প্রায় ১২ হাজার ৭০০ পারমাণবিক বোমা পৃথিবীর ৯টি দেশের কাছে রয়েছে। যার অধিকাংশই রাশিয়া ও আমেরিকার কাছে।
ডাচ পিস ওর্গানাইজেশনের প্রকল্প কর্মকর্তা আলেক্সান্দ্রা মুনোজ বলেন, যতদিন পর্যন্ত পারমাণবিক বোমা রয়েছে, ততদিন এর ব্যবহারের সম্ভাবনাও থাকবে।
পারমাণবিক যুদ্ধ হলে যা হবে
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা সায়েন্স অ্যান্ড গ্লোবাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের (এসজিএস) আওতায় এক গবেষণায় সিম্যুলেশন কাজে লাগিয়ে দেখতে পেয়েছেন, ন্যাটো ও রাশিয়ার সর্বাত্মক পারমাণবিক যুদ্ধে প্রথম ঘণ্টায়ই প্রাণ হারাবে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ এবং আহত হবে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ। তবে তেজস্ক্রিয় বিকিরণে অসুস্থ হওয়া কিংবা মৃত্যুবরণ করা, দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাবের কারণে মারা যাওয়াকে এর মধ্যে বিবেচনা করা হয়নি।
পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে যা বলছে রাশিয়া
এদিকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর আগেই রাশিয়ার পারমাণবিক বাহিনীকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফ্রান্সের পক্ষ থেকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে, শুধু রাশিয়ার কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র আছে, এমন তো নয়।
এমন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে রাশিয়ার নীতি আবারও জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তিনি বলেন, ‘একমাত্র রাশিয়ার অস্তিত্ব হুমকিতে পড়লেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে দেশটি।’