পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কোনো ষড়যন্ত্র হয়নি বলে দাবি করেছে সেদেশের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এ অভিযোগের প্রমাণ পায়নি। বিষয়টি তারা ইমরান খানকেও জানিয়েছিল।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশ শাসনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগে গত ৮ মার্চ পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো।
স্পিকার তা মঞ্জুর করলেও শেষমেষ বিষয়টিকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে ভোটের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। এর পরপর প্রেসিডেন্টের অনুমতি নিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন ইমরান।
ইমরান খান ও পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার আসাদ কায়সারের অভিযোগ, জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি প্রধানমন্ত্রীকে উচ্ছেদ করতে চক্রান্ত করছে। জাতীয় নিরাপত্তা কমিটিতে আছেন শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক ও সামরিক এবং গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানরা।
পাকিস্তানের রাজনীতি দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই টালমাটাল। কোনো নির্বাচিত সরকারই তার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণ করতে পারেনি। নানা কারণে কেউ পদ ছেড়েছেন, কেউ হয়েছেন হত্যার শিকার, কেউ অভিশংসিত আবার কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
সংকটে পাকিস্তানের গণতন্ত্র
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ইমরান খানের নেতৃত্বে জোট সরকার ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি কিছুটা বদলে যেতে দেখা যায়। তবে এক মাসের ব্যবধানে আচমকা বদলে গেছে দেশটির রাজনীতি। জোট সঙ্গীরা ইমরানকে সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিরোধী দলে যোগ দিয়েছে। কেবল তা-ই নয়, নিজ দলের অনেকেই ইমরানকে ছেড়ে গেছেন।
নতুন এই রাজনৈতিক সংকটে ফেলেছে ২২০ মিলিয়ন পাকিস্তানিকে। পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হয়। পাঁচ বিচারকের বেঞ্চে বিষয়টির শুনানি চলছে।
বিপদ আছে অন্যদিকেও। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের সুযোগ নিয়ে তিনবার ক্ষমতা দখলের ইতিহাস রয়েছে বাহিনীটির।
এই পরিস্থিতিতে পুরোনো বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতির বিষয়টিকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র
আফগানিস্তানের তালেবান ইস্যুতে কয়েক বছরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে ইমরান খান সরকারের। ক্ষমতা থেকে নামাতে বিরোধীদের যুক্তরাষ্ট্র ইন্ধন দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন ইমরান।
তবে এসব উড়িয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী নেতা শাহবাজ শরীফ, যিনি ইমরানের পতন হলে তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন। ইমরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিতে তিনি সেনা ও গোয়ান্দা প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় ইমরানের পক্ষে সামরিক বাহিনীর যে সমর্থন ছিল, তা অনেকটায় কমে গেছে নানা ইস্যুতে। যদিও সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে না বলে দাবি ইমরানের।
‘আমেরিকা বিরোধী কার্ড’
ইমরান খান সরকার ‘আমেরিকা বিরোধী কার্ড’ খেলার চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক লিসা কার্টিস। তিনি জর্জ বুশ ও ট্রাম্পের সরকারের হয়ে কাজ করেছেন।
ভয়েস অফ আমেরিকা ডিওয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কার্টিস বলেন, “আমেরিকার কোনো কর্মকর্তার পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জড়িত থাকার সম্ভাবনা একেবারেই কম। আমি মনে করি, ইমরান খান সমর্থন বাড়াতে ‘মার্কিন বিরোধী কার্ড’ খেলায় মেতেছেন।”
কার্টিস আরও বলেন, ‘ইমরান খানের আচরণে পাকিস্তানে আমেরিকাবিরোধী মনোভাব বাড়তে পারে। তিনি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে আনার চেষ্টা করছেন।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক সংকট থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রক্ষা করার চেষ্টা করছে।