বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাকিস্তানের ‘মুকুটে’ নতুন পালক ইমরান খান

  •    
  • ৩ এপ্রিল, ২০২২ ২০:৪৩

পাকিস্তান জন্মের ৬৫ বছরে এ পর্যন্ত ৩০ জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ বছর শাসন করা হয়নি কারও। যারাই সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন, শেষ মুহূর্তে নানা সমীকরণে তা আর হয়ে ওঠেনি।

উত্তরসূরিদের পথেই হাঁটতে হচ্ছে ইমরান খানকে। আগে ২৯টি সরকারের মতো সাবেক তারকা ক্রিকেটারের সরকারেরও মেয়াদ পূর্তির আগেই সরে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে গেল।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরাজ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর একটি সরকারেরও পাঁচ বছর মেয়াদ পূরণ করতে না পারাটা দেশটির দুর্বল রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রমাণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

ইমরান খানের ক্ষমতা থেকে যাওয়াটায় দেখা গেছে নাটকীয়তা। তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে দেশটির ডেপুটি স্পিকারের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে ভোটাভুটি হয়নি।

বিরোধীদের ক্ষোভ-প্রতিবাদের পর ইমরানের পরবর্তী পদক্ষেপ ছিল আরও অবাক করার মতো। তিনি নিজেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে অনুরোধ করেন প্রেসিডেন্টকে। কিছুক্ষণ পরই রাষ্ট্রপ্রধান আরিফ আলভি সে অনুযায়ী কাজ করেন।

পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ায় আগামী তিন মাসের মধ্যেই ফের নির্বাচন হবে পাকিস্তানে।

ইমরানের এই চলে যাওয়াটা অপমানজনক হয়নি বলা চলে। তবে এর আগের সরকারপ্রধানদের ক্ষেত্রে কারও কারও গেছে জীবনও। কেউ কেউ বিপদ বুঝে সরে গেছেন স্বেচ্ছায়।

কেউ হত্যার শিকার হয়েছেন, কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে আবার কেউ হয়েছেন অভিশংসিত। মাঝেমধ্যে দেশটিতে সেনা অভ্যুথানও দেখা গেছে।

পাকিস্তান জন্মের ৬৫ বছরে এ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ৩০ জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ বছর শাসন করা হয়নি কারও।

এই প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে কম সময় শাসন করেছেন যিনি, তিনি ক্ষমতায় ছিলেন কেবল ১৩ দিন। আবার নওয়াজ শরিফ শাসন করেছেন সাত বছরের বেশি। তবে সব মিলিয়ে তিনি তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। বেনজীর ভুট্টো দুইবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তবে তিনি মেয়াদ পূরণ করার কাছাকাছি যেতে পারেননি একবারও।

সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতা থাকা প্রধানমন্ত্রীরা

২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসা ইউসুফ রাজা গিলানি যখন মেয়াদ পূর্ণ করবেন বলে আলোচনা ওঠে, সে সময় আচমকা সরে যেতে হয় তাকে। দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণার পর ৪ বছর ৮৬ দিনের মাথায় তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়।

পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইউসুফ রাজা গিলানি। ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট যেদিন ভারত ভাগ হয় সেদিন পাকিস্তানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। ক্ষমতার চার বছর ৬৩ দিনের মাথায় ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান লিয়াকত আলী খান।

পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান। ছবি: সংগৃহীত

জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৩ সাল থেকে তিন বছর ৩২৫ দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৭ সালের ৫ জুলাই জেনারেল জিয়া-উল-হকের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

ভুট্টোর পর ক্ষমতায় আসেন মহম্মদ খান জুনেজো। তিনি তিন বছরের কিছু বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলেন। ১৯৯০ সালের নভেম্বরে তাকে সরিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল হক।

নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের দ্বাদশ প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৩ সালে প্রেসিডেন্ট ইসহাক পার্লামেন্ট ভেঙে দিলে পদ হারান তিনি। তিন বছর ১০ মাস ক্ষমতায় ছিলেন তিনি।

পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ছবি: সংগৃহীত

২০১৩ সালে ফের ক্ষমতায় ফেরেন আগে দুইবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নওয়াজ শরিফ। তবে এই দফায়ও ক্ষমতা পূর্ণ করতে পারেননি। চার বছর ৫৩ দিনের মাথায় দুর্নীতির দায়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সুপ্রিম কোর্ট।

১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে বেনজীর ভুট্টো ৩ বছর ১৭ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, হত্যার পরিকল্পনাসহ নানা অভিযোগ আনা হয়। প্রেসিডেন্ট ফারুক লেঘারি তার সরকার ভেঙে দেন।

বেনজীর ভুট্টো ৩ বছর ১৭ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়া শওকত আজিজ সেনাপ্রধান পারভেজ মোশারফের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিন বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৭ সালের নভেম্বরে নিজে থেকেই সরে যান আজিজ।

দুই বছর বা তার কম সময়ে ক্ষমতায় যারা ছিলেন

পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টো। প্রধানমন্ত্রী পদে প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে ১৯৯০ সালে নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি গোলাম ইসহাক খান তাকে বরখাস্ত করেন।

২০০২ সালের নভেম্বরে ক্ষমতায় আসা জাফরুল্লাহ খান জামিলি প্রায় দুই বছর দেশ শাসন করেন। ২০০৪ সালের জুনে পদত্যাগ করেন তিনি। তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে একটি লম্বা বৈঠকের পর ক্ষমতা ছেড়ে দেন তিনি।

মোহাম্মদ আলী ১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে দুই বছর ১১৭ দিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শাসন করেন। তবে তার সঙ্গেও তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল ইসকান্দার মির্জার বোঝাপড়া ভালো যাচ্ছিল না। ১৯৫৫ সালের আগস্টে ইস্তফা দেন তিনি।

পাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মালিক গোলামের কিছু ইস্যুতে মতবিরোধ ছিল। এ জন্য তাকে পদ ছাড়তে বলা হয়েছিল। তা না করায়, বিশেষ ক্ষমতায় নাজিমুদ্দিনকে ক্ষমতাচ্যুত করেন মালিক গোলাম।

পাকিস্তানের বাঙালি চার প্রধানমন্ত্রী; (বাঁ থেকে) খাজা নাজিমুদ্দিন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মোহাম্মদ আলী এবং নুরুল আমীন। ছবি: সংগৃহীত।

১৯৫১ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে ১৯৫৩ সালের ১৭ আগস্ট এক বছর ১৮২ দিন ক্ষমতায় ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন।

পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি ১৯৫৬ থেকে শুরু করে এক বছর ৩৫ দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গভর্নর জেনারেল ইসকান্দারের চাপে তাকেও গদি ছাড়তে হয়।

১৯৫৫ সাল থেকে এক বছরের কিছু বেশি সময় পাকিস্তানের মসনদে ছিলেন চৌধুরী মোহম্মদ আলী। দলবিরোধী কাজকর্মের অভিযোগে ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

সবচেয়ে কম সময় ছিলেন যারা

পাকিস্তানের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিন সবচেয়ে স্বল্পমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী। মাত্র ১৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন নুরুল। পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে পদত্যাগ করেন তিনি।

সাবেক ক্রিকেটার মীর বালাখ শের মানজারি ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে ক্ষমতায় আসেন। এক মাসের কম সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

পাকিস্তানের ১৬তম প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী সুজাত হোসেনের শাসনকাল ছিল ৫৭ দিনের। শওকত আজিজের হাতে ২০০৪ সালের আগস্টে নিজেই ক্ষমতা ছেড়ে দেন তিনি।

মাত্র দুই মাস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দিরগার। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার ঘোষণা কাল হয়েছিল তার। অনাস্থা ভোটে ১৯৫৭ সালের ডিসেম্বরে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

ফিরোজ খান নুনের শাসনকাল ছিল ২৯৫ দিনের। এই সময়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। বলা হয়ে থাকে এই আতঙ্কে তাকেও ক্ষমতাচ্যুত করেন গভর্নর ইসকান্দার।

মইন কুরাসী ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মাথায় পদ ছাড়েন। আরেক সাবেক ক্রিকেটার মালিক মেরাজ খালিদের মেয়াদও ছিল তিন মাসের কাছাকাছি। অবসরপ্রাপ্ত বিচারক নাসির-উল মুল্ক ক্ষমতায় ছিলেন দুই মাসের কম সময়। ২০১৮ সালের জুনে দায়িত্ব নেয়ার প্রায় ৭৮ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন তিনি।

পাকিস্তানের উনিশতম প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ এক বছরের আগেই ক্ষমতা ছেড়ে দেন। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ২৭৫ দিন। দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে ২০১৩ সালে ২৪ মার্চ পদ ছাড়েন আশরাফ।

নওয়াজের পর ৩০৩ দিনের জন্য পাকিস্তানের দায়িত্ব সামলান শাহিদ খাকন আব্বাসী। তবে ২০১৮ সালে নির্বাচন ঘিরে পদ ছাড়তে হয় তাকে।

এই নির্বাচনে জয় পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে আসেন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খান। সেনা সমর্থন থাকায় ধারণা করা হচ্ছিল, মেয়াদ পূর্ণ করে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন ইমরান। কিন্তু জোট সঙ্গীদের সমর্থন হারানোয় পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখে পড়েন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর