রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনার বিনিময় মুদ্রা রুবল করায় বিপাকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। মহাদেশটির সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানি ইতোমধ্যে এই ইস্যুতে ‘আগাম সতর্কতা’ জারি করেছে। সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহারে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে জার্মান সরকার।
ইউক্রেন ইস্যুতে মস্কোয় নিষেধাজ্ঞা দেয়া দেশগুলোকে রুবলের বিনিময়ে তাদের গ্যাস কিনতে হবে বলে গত সপ্তাহে ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
প্রতিবেশী ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে পশ্চিমা বিভিন্ন রাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এতে রুশ মুদ্রা রুবলের মান পড়ে গেছে। প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেন ও তার মিত্র দেশগুলোর ওপর এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন পুতিন।
- আরও পড়ুন: রাশিয়ার গ্যাস রুবলে কিনতে হবে ইউরোপকে
ইউরোপে গ্যাসের চাহিদার সবচেয়ে বড় যোগানদাতা রাশিয়া। গেল বছর ইউরোপে যত গ্যাস আমদানি হয়েছে তার প্রায় অর্ধেক এসেছে মস্কো থেকে। কেবল ইউরোপেই নয়, গোটা বিশ্বে গ্যাস রপ্তানিতে শীর্ষে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া।
পশ্চিম ইউরোপের দেশ জার্মানি গত বছর তাদের আমদানির ৫৫ শতাংশ গ্যাস এনেছিল রাশিয়া থেকে। যদিও চলতি বছরের প্রথম কয়েক মাসে তা ৪০ শতাংশে নেমেছে। আর এর কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ।
জার্মানির অর্থনীতি ও জলবায়ু সুরক্ষামন্ত্রী ব়্যোবার্ট হ্যাবেক বলছেন, ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ের আগে গ্যাস আমদানিতে রুশ নির্ভর্শীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না তার দেশ।
প্রেক্ষাপট
বন্ধু নয় এমন দেশে ৩১ মার্চ থেকে রুশ মুদ্রা রুবলে গ্যাস বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়া থেকে বেশিরভাগ দেশ আমেরিকান ডলার কিংবা ইউরোতে গ্যাস কিনে থাকে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পাল্টা পদক্ষেপে রুবলকে হাতিয়ার করেন পুতিন।
রবার্ট হ্যাবেক অবশ্য পুতিনের এই সিদ্ধান্তকে উড়িয়ে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, আগের চুক্তিতেই তারা গ্যাস আমদানি করবে।
হ্যাবেক বলেন, ‘রুবলে অর্থ পরিশোধ অগ্রহণযোগ্য। পুতিনের এই সিদ্ধান্ত না মানতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাচ্ছি।’
- আরও পড়ুন: রাশিয়ার গ্যাস রুবলে নেবে না জি-সেভেন
গ্যাস আমদানিতে জার্মান প্রতিষ্ঠান ইউনিপার, আরডব্লিওই এবং ইএনবিডব্লিও এর ভিএনজির সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। তবে পুতিনের ঘোষণার বিষয়ে এসব প্রতিষ্ঠান কোনো মন্তব্য করেনি।
হ্যাবেক বলেন, ‘জার্মানিতে মোট চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ গ্যাস মজুত আছে। তবে তা কতদিন স্থায়ী হবে তা মূলত কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। যদি প্রচুর গরম পরে, তবে মজুত দ্রুত ফুরিয়ে যাবে।’
বার্লিনের জরুরি পরিকল্পনা কি?
সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জার্মান সরকার। ‘ইমার্জেন্সি প্ল্যান গ্যাস’ পরিকল্পনার আওতায় তারা এই সংকটকে তিন ধাপে ভাগ করেছে। এগুলো হলো গ্যাস সংরক্ষণ, সরবরাহ সুরক্ষিত করা এবং ব্যক্তিপর্যায়ে পর্যাপ্ত জ্বালানি নিশ্চিত করা।
প্রথম ধাপে এরইমধ্যে জারি হয়েছে আগাম সতর্কতা। সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে, জরুরি অবস্থা জারি করে সংরক্ষণে দেয়া হবে জোর।
হ্যাবেক বলেন, ‘আমরা এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে আছি, যখন প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা শক্তি আমাদের সঞ্চয় করতে হবে। সে কারণে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়ে প্রতিটা নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে।’
দ্বিতীয় ধাপকে বলা হচ্ছে ‘সতর্কতা’। এই ধাপে সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। এতে ব্যাঘাত ঘটলে অথবা চাহিদা অনুযায়ী যোগান না দিতে পারলে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ছাড়াই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই ব্যবস্থা নিতে পারবে।
যখন বাজারভিত্তিক ব্যবস্থা ঘাটতি মেটাতে ব্যর্থ হবে তখন জারি হবে তৃতীয় ধাপ-জরুরি অবস্থা। এই পর্যায়ে জার্মানির নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বুন্দেসনেটজাজেন্টুর গ্যাস বণ্টনের ক্ষমতা পাবে। প্রয়োজন অনুযায়ী দেশজুড়ে অবশিষ্ট গ্যাস কিভাবে বিতরণ করা হবে তা নিশ্চিত করবে এই সংস্থা।
কী প্রভাব পড়বে?
জার্মান সরকার যদি পর্যাপ্ত গ্যাস সংরক্ষণ না করতে পারে, তবে সবার আগে আঘাত আসবে শিল্পখাতে। জার্মানি গ্যাসের চাহিদার এক চতুর্থাংশ এই খাতে ব্যবহার হয়।
জার্মান এনার্জি গ্রুপ ইওএন-এর প্রধান নির্বাহী লিওনহার্ড বার্নবাউম বলছেন, ‘এর প্রভাবে উৎপাদন কমে যাবে, সাপ্লাই চেইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা ভয়াবহ।’
এই পরিস্থিতিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে গুরুত্ব পাবে আবাসিক ভবন। সে ক্ষেত্রে হাসপাতাল, বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চরম বিপর্যয়ে পড়বে একপর্যায়ে।