বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সঙ্গী হারিয়ে ইমরান ছুটলেন সেনাপ্রধানের কাছে

  •    
  • ৩০ মার্চ, ২০২২ ২১:০৯

জোট সঙ্গীরা ছেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের আগেই পদ হারানোর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। অলৌকিক কিছু না ঘটলে উত্তরসূরিদের পরিণতি বরণ করে নিতে হতে পারে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া এই নেতাকে। আগামী ৩ এপ্রিল অনাস্থা ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব ওঠার পর প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানো ইমরান খানের জন্য সময়ের ব্যাপার হয়ে গেছে। এরই মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন জোট সঙ্গী মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট এমকিউএম-পির নেতা ফারুগ নাসিম ও আমিনুল হক।

সরকারে থাকতে পার্লামেন্টে যত ভোটের প্রয়োজন, সেটি নিশ্চিত করা যখন কঠিন হয়ে যাচ্ছে, তখন এমকিউএম-পি ইমরানকে দিল কঠিন ধাক্কা। ইমরানের জোট ছেড়ে যোগ দিয়েছে বিরোধী শিবিরে।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী দেশটির সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় মূলধারার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। যদিও পাকিস্তানি পত্রিকাগুলোতে বিষয়টি সেভাবে আসেনি।

ইমরান খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেটিও পরে বাতিল হয়েছে। সব মিলিয়ে তার প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকাটাই নানা সমীকরণে এখন বিস্ময়কর।

জোট সঙ্গীর এমন অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের আগেই পদ হারানোর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। অলৌকিক কিছু না ঘটলে উত্তরসূরিদের পরিণতি বরণ করে নিতে হতে পারে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খানকে। আগামী ৩ এপ্রিল অনাস্থা ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের প্রচার আহ্বায়ক খালিদ মকবুল সিদ্দিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমরা একত্রিত হয়েছি। আমাদের সামনে এমন একটি পরীক্ষা অপেক্ষা করছে, যার মধ্য দিয়ে জাতীয় নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে।

‘আজ প্রার্থনার দিনও... সাধারণ মানুষের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আমি আশা করি, এবার আমরা এমন একটি গণতন্ত্রের জন্য কাজ করতে পারি, যার প্রভাব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে।’

বিরোধী দলে যোগ দেয়ার বিষয়ে মকবুল সিদ্দিক বলেন, ‘অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আসলে আমাদের কোনো ব্যক্তি বা দলীয় সুবিধা নেই।

‘আমাদের চুক্তির প্রতিটি ধারা পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের জন্য; বিশেষ করে সেসব এলাকার জন্য যাদের আমরা গত ৩৫ বছর ধরে প্রতিনিধিত্ব করে আসছি। আমরা ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে পাকিস্তানের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছি।’

মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের এই ঘোষণার পর বক্তব্য দেন জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলের নেতা শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, ‘আজ পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ একটি যৌথ বিরোধী দল গঠন হতে যাচ্ছে।’

‘আমি এমকিউএম-পি এবং এর কর্মীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা ২২ কোটি পাকিস্তানির ইচ্ছা বাস্তবায়ন করেছেন। বিশেষ করে আসিফ আলি জারদারি এবং বিলাওয়ালের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা আলোচনার এই প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেছেন। ইতিহাসকে একপাশে রেখে তারা পাকিস্তানের সমৃদ্ধি এবং করাচির সুখের এই যাত্রা শুরু করেছে।’

পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ইসলামাবাদে একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন। ছবি: পিপিপি মিডিয়া সেল/টুইটার

এমকিউএম-পির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বেনজির ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। দলের প্রধান বিলওয়াল ভুট্টো বলেন, ‘ইমরান খান তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। তিনি আর প্রধানমন্ত্রী নন। বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশন। আসুন এদিনই ভোটের আয়োজন করি, বিষয়টির নিষ্পত্তি করি। তারপর স্বচ্ছ নির্বাচন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যাত্রা শুরু করতে পারি।’

জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল (জেইউআই-এফ) প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমানও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এটি শুধু করাচি কিংবা সিন্ধু নয়, পুরো পাকিস্তানের জন্য জাতীয় ঐক্যের অভিব্যক্তি।’

‘এই সিদ্ধান্তের ফলে (সরকারের মিত্ররা বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে) জাতীয় পরিষদে আমাদের শক্তি এখন ১৭৬-এ দাঁড়িয়েছে। যেখানে আমাদের দরকার ছিল ১৭২ ভোট।’

আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর এমকিউএম-পি প্রচার আহ্বায়ক খালিদ মকবুল সিদ্দিক দুটি চুক্তিতে সই করেন। একটি পিপিপির বিলওয়ালের সঙ্গে, অন্যটি পিএমএল-এন-এর আহসান ইকবালের সঙ্গে।

ইমরানের মন্ত্রিসভায় ভাঙন

জোট সরকারের অন্যতম সঙ্গী এমকিউএম-পি। দলটির নেতা ফারুগ নাসিম এবং আমিনুল হক ইমরান খান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। নাসিম ছিলেন আইনমন্ত্রী। পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, এমকিউএম-পি আহ্বায়ক খালিদ মকবুল সিদ্দিকীর নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

আমিনুল হক ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম মন্ত্রীর দায়িত্বে। পদত্যাগপত্রে তিনি জানিয়েছেন, দলের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই পদ ছাড়ছেন।

গভীর রাতে বৈঠক

মঙ্গলবার গভীর রাতে জরুরি বৈঠক ডাকে এমকিউএম-পি। রাজনীতিতে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, আঁচ করতে পেরেছিল নাগরিকরা। টিভি পর্দায় তাই চোখ ছিল সবার।

মধ্যরাতের কিছু আগে খাজা আসিফ, শেরি রেহমান, নাভিদ কামার, আয়াজ সাদিক, আখতার মেঙ্গল, সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ এবং অন্যদের সমন্বয়ে একটি বিরোধী প্রতিনিধিদল পার্লামেন্টে আসে।

রাত ২টার দিকে বৈঠকে যোগ দেন আসিফ আলি জারদারি এবং তার ছেলে বিলাওয়াল, মাওলানা ফজলুর রহমান ও শেহবাজ শরিফ। আলোচনা চলে ভোর পর্যন্ত।

ইমরানবিরোধীরা যখন পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে বৈঠক করছিলেন, তখন সরকারের একটি প্রতিনিধিদল এমকিউএম-পি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিরোধীদের সঙ্গে না যেতে তাদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে এমকিউএম-পি।

পরে সাংবাদিকদের সিন্ধুর গভর্নর ইমরান ইসমাইল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বার্তা খালিদ মকবুল সিদ্দিকী এবং তার সমর্থকদের পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে নতুন সমঝোতার সুযোগ রয়েছে। তাদের সব চাওয়া পূরণ হবে। আমরা অপেক্ষায় আছি।’

তবে বিরোধীদের সঙ্গে কোনো সমঝোতার চেষ্টা হয়নি বলে দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন পিটিআই নেতা ফয়সাল ভাওদা। তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলাম। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইসলামাবাদ থেকে করাচিতে ফিরে আসি।’

পার্লামেন্টে ভোটের হিসাব-নিকাশ

নিম্নকক্ষে ৩৪২ আসনের মধ্যে বিরোধীদের দখলে আছে ১৬৩টি। বাকি ১৭৯ আসন। এর মধ্যে ইমরানের দলের আছে ১৫৫টি, চার জোটসঙ্গীর ২০টি।

পিটিআইয়ের বেশ কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্য এরই মধ্যে প্রকাশ্যে ইমরানের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া বুধবার ইমরান সরকারের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি)-এর ৭ এবং বালুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি)-এর ৫ আসন রয়েছে। সমর্থন প্রত্যাহারকারী জামহুরি ওয়াতন পার্টির রয়েছেন এক সদস্য। পিএমএল-কিউ-এর সদস্য ৫।

এই পরিস্থিতিতে গদি বাঁচাতে মরিয়া ইমরান সোমবার পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদারকে সরিয়ে জোট সঙ্গী পিএমএল-কিউ-এর চৌধুরী পারভেজ এলাহীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিছুদিন আগেও ইমরান সরকারের জোট ছেড়ে বিরোধী দলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন চৌধুরী পারভেজ এলাহী।

সেনাপ্রধানের সঙ্গে ইমরানের সাক্ষাৎ

পাকিস্তানের রাজনীতিতে দেশটির সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা ব্রিটিশ রাজ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। দেশটির ক্ষমতা বারবার দখল করেছে বাহিনীটি।

বলা হয়ে থাকে, যখন বেসামরিক সরকার থাকে, তখনও সেনাপ্রভাব থাকে ব্যাপক। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বাইরে যাওয়ার সুযোগ খুবই কম।

গত নির্বাচনে ইমরান খানের বিস্ময়কর উত্থানের পেছনে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে সেনা সমর্থনের বিষয়টি। তবে তেহরিক নেতা কখনও স্বীকার করতে চাননি। তার দাবি, জনগণই তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে।

ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে বুধবার বিকেলে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে এই সাক্ষাতে কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

সন্ধ্যায় সহযোগী এবং দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে পদত্যাগের ঘোষণা আসতে পারে বলেও গুঞ্জন উঠেছিল। পরে টুইটে ভাষণ বাতিল করার কথা জানান পিটিআই নেতা ফয়সাল জাভেদ খান।

এ বিভাগের আরো খবর