পাকিস্তানের রাজনীতিতে যেন ইঁদুর খেলা চলছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন ইমরান। তিনি আগেই জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করবেন না।
গত রোববার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে এক সমাবেশে ভাষণ দেয়ার সময় বলেন, গত ৩০ বছর ধরে পাকিস্তানকে লুটপাট করছে তিন ইঁদুর।
এই ‘তিন ইঁদুর’ বলতে ইমরান খান তার আগে ক্ষমতায় থাকা নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। এর মধ্যে তিনি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের অবস্থানকেও বুঝিয়েছেন।
ইমরান বলেছেন, ‘এই তিন ইঁদুর একজোট হয়ে গত ৩০ বছর এই দেশের রক্ত চুষেছে। দেশের বাইরে তারা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সম্পদ গড়েছে।’
এবার এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে এবার মুখ খুলেছেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, নওয়াজ শরীফের কন্যা মরিয়ম নওয়াজ। তিনি বলেন, ‘ইমরান খানই প্রকৃত ইঁদুর যিনি পাকিস্তানের সম্পদ ধ্বংস করছেন।’
মরিয়ম দাবি করেন, ট্যাক্স দাতাদের টাকায় ইমরান এখন দলীয় র্যালি করছেন ইমরান খান।
এই সময় মরিয়ম তার বাবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে ভূমিপুত্র আখ্যা দিয়ে বলেন, খুব শীঘ্রই তিনি দেশে ফিরবেন।
এদিকে রোববার ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দাবি করেছেন, তার কাছে লিখিত প্রমাণ আছে যে বিরোধী জোটকে কাজে লাগিয়ে বিদেশী শক্তি তার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টায় জড়িত। যদিও ইমরান খান কোনো দেশ বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেননি।
তিনি বলেন, ‘বিদেশী শক্তি আগেও পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তন করেছে, তবে এখন সময় বদলেছে।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইরের শক্তির স্বার্থে আঘাত লাগায় আবারও সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করে বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসা অর্থে পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের লোকদের ব্যবহার করা হচ্ছে, বেশির ভাগই না বুঝেই জড়িয়ে যাচ্ছে, কেউ আবার ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে অর্থ ব্যবহার করছে।’
ইমরান খান দাবি করেন, তিনি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েক মাস ধরেই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এবং কোন জায়গা থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে তাও তারা জানেন।
তিনি বলেন, ‘এর আগেও আমাকে লিখিতভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে, তবে আমি আপোষ করবো না।
‘যখন জুলফিকার আলী ভুট্টো স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি তৈরির চেষ্টা করেছিলেন, তখন নওয়াজ শরীফের দলই তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। ফলে ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।’
ইমরান খান বলেছেন, এটা সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ কোনো কিছুই গোপন রাখা যায় না। আমরা কারো হুকুমই মানবো না। আমাদের বন্ধু থাকবে, আমরা কারো দাস হবো না।
তিনি জানিয়েছেন, উপযুক্ত সময়ে বিদেশী চক্রান্ত নিয়ে তিনি আরও কথা বলবেন।
ইসলামাবাদের প্যারেড গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তারা চায় ইমরান খান তাদের সামনে নতজানু হোক, যেমনটা জেনারেল পারভেজ মোশাররফ করেছিলেন।’
পাক প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ক্ষমতায় আসার প্রথম দিন থেকেই বিরোধীরা তার সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করছে।
এ সময় আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়া হাজার হাজার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইমরান। সরকার উৎখাতে বিরোধী সাংসদদের অনাস্থা ভোটকে সামনে রেখে এই রাজনৈতিক সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। দুর্নীতি, বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ তুলে এই অনাস্থা প্রস্তাব আনছে বিরোধীরা।
গত ৮ মার্চ রাজধানী ইসলামাবাদে বিরোধীদল পিপলস পার্টির লংমার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার পরই সবগুলো বিরোধী শক্তি এক হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করে। বিরোধীদলগুলোর আত্মবিশ্বাস, ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই এর অনেক সাংসদও তাদের ডাকা অনাস্থা প্রস্তাবে যোগ দেবে।
তবে, ইমরান খান অবশ্য নিজ দলের সাংসদদের প্রতি বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন, যেন তারা লোভে পড়ে, নিজেদের সর্বনাশ ডেকে না আনেন।