ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর পশ্চিমারা একের পর এক অবরোধ দিচ্ছে রাশিয়ার ওপর। ইউক্রেনের দাবি বিনা উসকানিতে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে একচেটিয়া সমর্থন দিলেও বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীনের অবস্থান পশ্চিমাদের সম্পূর্ণ বিপরীত।
আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেন সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে বলেছে, সবাই জানে ‘ইউক্রেন সংকটের’ জন্য কোন দেশটি দায়ী।
নাম উল্লেখ না করে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন, বেইজিং ইউক্রেনে রুশ হামলা সম্পর্কে আগে থেকেই জানত। এমনকি চীনের পক্ষ থেকে রাশিয়াকে শীতকালীন অলিম্পিক ২০২২-এর জন্য সামরিক অভিযান শুরুর দিন পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। চীনের কথা রাখতে গিয়েই শীতকালীন অলিম্পিক শেষে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তার এমন মন্তব্যে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ কিয়ান যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বলেন, দেশটি ‘মিথ্যুক ও ঝামেলা সৃষ্টিকারী’।
এমনকি রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে উ কিয়ান বলেন, এমন কিছু বলা ‘মারাত্মক ভুল তথ্য’ যা চীনের প্রতি দোষারোপ বা কাদা ছোড়াছুড়ির ক্ষেত্রেই ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, ‘অভিযোগগুলো মিথ্যাবাদী ও সমস্যা সৃষ্টিকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আসল চেহারাই তুলে ধরে এবং চীনকে লক্ষ্য করে ইউক্রেন ইস্যুতে যে মিথ্যা ও ক্ষতিকর তথ্য যুক্তরাষ্ট্র ছড়াচ্ছে তার দৃঢ় বিরোধিতা করে চীন।’
চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াশিংটনের প্রতি ইঙ্গিত করে জোর দিয়ে বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ বিভিন্ন কারণে এবং একটি জটিল ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণে শুরু হয়েছে। কিন্তু আমরা বুঝতে পারি, কোন বৃহৎ শক্তি আজকের সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী।’
উ কিয়ান বলেন, ‘বেইজিং চায়, সকল পক্ষ যেন ইউক্রেন সংকটের উত্তেজনা কমিয়ে আনতে আলোচনার দরজা খোলা রাখে এবং চীন সেখানে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে।’
এ সময় তিনি ইউরোপে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, কার্যকরী এবং টেকসই ইউরোপীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
বৈশ্বিক ইস্যুতে চীনের গঠনমূলক ভূমিকার বিষয়ে উ কিয়ান বলেন, ‘চীন কখনও অন্য কোনো দেশ আক্রমণ করেনি, কখনো প্রক্সি যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি, প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেনি, কোনো সামরিক ব্লকের সংঘর্ষে অংশও নেয়নি।’
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য এমন সময় এলো যখন একই দিনে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ইউক্রেন ও ইইউর দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ‘পুতুলে’ পরিণত হয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।