পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা এরই মধ্যে টালমাটাল। শুক্রবারই হতে যাচ্ছে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট। এমন পরিস্থিতিতে ইমরান খান বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদের প্যারেড গ্রাউন্ডে জনতার শক্তি দেখাতে ‘খারাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে’ জাতিকে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানি পত্রিকা ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগেই রেকর্ড করে রাখা এক বার্তায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পবিত্র কোরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, মুসলিমকে বলা হয়েছে ‘ভালোর পক্ষে ও মন্দের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে।’
তিনি বলেন ‘নির্লজ্জভাবে, সবার সামনে, একটি চোরের গোষ্ঠী ৩০ বছর ধরে দেশটাকে লুটপাট করছে, দুর্নীতি করছে, অর্থ বিদেশে পাঠাচ্ছে।’
ইমরান খান বলেন, এই গোষ্ঠী এবার একত্রিত হয়েছে ও জনপ্রতিনিধিদের ‘বিবেক’ কিনে নিয়েছে এবং দেখিয়ে দিয়েছে এসব জনপ্রতিনিধিকেও কেনা যায়।
আমি চাই পুরো জাতি যেন আসছে ২৭ মার্চ আমার সঙ্গে যোগ দেয়, আমরা মন্দের সঙ্গে নই, আমরা এর বিরুদ্ধে, জাতির ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে হওয়া যেকোনো অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা।
গত ৮ মার্চ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থার প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকারের কাছে লিখিত আবেদন জানায় তারা।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, লিখিত আবেদন জমা পড়ার ১৪ দিনের মধ্যে স্পিকারকে অধিবেশন ডাকতে হবে; যা ২২ মার্চ হওয়ার কথা ছিল। তবে এদিন জাতীয় পরিষদে শুরু হয় ওআইসির দুই দিনব্যাপী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন। তাই ২৫ মার্চ অধিবেশন ডাকেন স্পিকার আসাদ কায়সার।
এর আগেও অনাস্থা ভোটের পরীক্ষা দিতে হয়েছিল ইমরান খানকে। ২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার তিন বছরের মাথায় গত মার্চে অনাস্থা ভোট হয় ইমরানের বিরুদ্ধে। সেবার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় অনায়াসেই উতরে গিয়েছিলেন ইমরান।
তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নিজ দল তেহরিক-ই-ইনসাফেই কোন্দল দেখা দিয়েছে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বেশ কয়েকজন সদস্য পিটিআই ছেড়ে বিরোধী শিবিরে যোগ দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, জোট সরকারের অন্যতম তিন দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি), পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদ (পিএমএল-কিউ) এবং বালুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) বিরোধী শিবিরে যোগ দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সাফ জানিয়েছেন পদত্যাগ করছেন না।
তিনি বলেন, ‘যা-ই ঘটুক, আমি পদত্যাগ করব না। আমি শেষ বল পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাব। বিরোধীদের তাদের সব কার্ড দেখিয়ে ফেলেছে। আমি তাদের জানাতে চাই, আপনাদের জন্য বড় চমক অপেক্ষা করছে।’
৩৪২ সদস্যের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে টিকে থাকতে হলে ইমরান খানকে অন্তত ১৭২ সদস্যের সমর্থন পেতে হবে।