বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গোপন যুদ্ধে মোসাদকে পাল্টা জবাব ইরানের

  •    
  • ২৩ মার্চ, ২০২২ ১৭:৪২

মোসাদ যতই ত্রুটিপূর্ণ হোক না কেন, ইরানে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এটিকেই বিশ্বের শীর্ষ সংস্থা হিসেবে ধরা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বকে ইসরায়েল এতো পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্য দেয় যে, ‘স্টার্ট আপ নেশন’ হিসেবে খ্যাত দেশটি গুপ্তচরবৃত্তির জন্যই পশ্চিমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ইসরায়েলকে বিশ্বের অন্যতম সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তিতে পরিণত করার পেছনে পশ্চিমা দেশের সমর্থনের পাশাপাশি এর গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ভূমিকাও কম নয়। বিশ্বখ্যাত এ গোয়েন্দা সংস্থা রাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এমন ব্যক্তি, সংস্থা বা দেশের ওপর নজর রাখছে অবিরাম। তবে সম্প্রতি মোসাদের গোয়েন্দাগিরির পালটা জবাব দিয়েছে ইরান ও তুরস্কের মতো দেশগুলো। মধ্যপ্রাচে মোসাদের দোটানা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইসরায়েল ভিত্তিক পত্রিকা ‘দ্য জেরুজালেম পোস্ট’। সেটি অবলম্বনে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।

ইরান ও হামাসের অস্ত্রবিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বছরের অভিযানগুলো বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছে বলে দাবি করছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। তবে এই গোয়েন্দা সংস্থাটি পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত নয়, বরং এটি রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ দিয়ে পরিচালিত এক সংস্থা।

প্রায়ই ইরান বা অন্য শত্রুরা মোসাদকে পাল্টা আক্রমণ করছে। চলতি মাসের শুরুতেও এর নজির দেখা গেছে।

তেহরান দাবি করেছে তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইরাকের এরবিল শহরে প্রায় এক ডজন মোসাদ এজেন্ট হতাহত হয়েছেন। নিহত ও আহতের সংখ্যা এবং বাকি এজেন্টদের কীভাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত জানিয়েছে তেহরান।

ইরান আরও দাবি করেছে, তাদের ফরদো নিউক্লিয়ান প্ল্যান্টে আক্রমণ করার সুযোগে থাকা মোসাদের একটি দলকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। দ্য জেরুজালেম পোস্টের সূত্র জানিয়েছে, ফরদো মোসাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

এটি অবশ্য চমকে যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা নয়। কারণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে ফরদো দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ইরানে নিউক্লিয়ার অস্ত্র বিকাশের পরবর্তী ধাপের জন্য এ কেন্দ্রকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও ধরা হয়।

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার জন্য ফরদোর আই আর সিক্স অ্যাডভানসড সেন্ট্রিফিউজ ইউনিটের একজন সদস্যের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের যোগাযোগ করার তথ্য আয়াতুল্লাহ সরকার অস্বাভাবিক বিশদভাবে প্রকাশ করেছে।

ইরানের সংবাদ মাধ্যম পুরো ঘটনাটি প্রচারের ক্ষেত্রে ছিল অত্যন্ত নমনীয়। এর মধ্যে একটি ছিল ইরানের বিরুদ্ধে মোসাদের অতীতের অনেক সাফল্য স্বীকার করে নেয়া। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মোসাদ এজেন্টদের হত্যা করা নিয়ে ইরানি দাবির বিষয়ে ব্যাপক সংশয় প্রকাশ করেছে বিশ্ব মিডিয়া। অনেক সময় আবার মোসাদের এজেন্ট গ্রেপ্তারের নাম করে স্থানীয় বিরোধীদলীয় কর্মীদের আটক করেছে ইরান।

একই ভাবে গত অক্টোবরে তুরস্কের দাবি করা মোসাদ এজেন্টদের গ্রেপ্তারের ঘোষণাটি আসল নাকি ভুয়া সেটি নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তুরস্ক আটক করা গোয়েন্দাদের ছবি ও নামের আদ্যক্ষর প্রকাশ করেছিল, পুরো নাম নয়।

জেরুজালেম পোস্টের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ডের কুদ বাহিনীর সাবেক প্রধান কাসেম সোলেমানি হত্যার চেষ্টা করেছে মোসাদ- তেহরানের করা এমন অন্তত একটি ঘোষণা মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর ছিল। ২০২০ সালে সোলেমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।

মোসাদের সাবেক ডেপুটি চিফ ও বর্তমান নেসেতের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ডিফেন্স কমিটির চেয়ারম্যান রাম বেন বারাক তুর্কি দাবিকে পুরোপুরি মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে তিনি বা অন্য কোনো ইসরায়েলি কর্মকর্তা গত সপ্তাহে ইরানের আক্রমণের বিষয়ে জোর গলায় এ রকম কিছু বলেননি।

অতীতে মোসাদের বেশ কিছু ব্যর্থতার নজির নথিবদ্ধ আছে। যেমন ২০১০ সালে বেশ কয়েকজন কথিত মোসাদ এজেন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতে অভিযানের সময় সিসিটিভিতে ধরা পড়েন। তারা সে সময় হামাসের শীর্ষ নেতা মাহমুদ আল-মাবুহকে হত্যা করার মিশনে ছিলেন। পুরো ঘটনাটি ইসরায়েলের জন্য ছিল একটি কূটনৈতিক দুঃস্বপ্নের মতো। কারণ অনেক মিত্র পশ্চিমা দেশ তাদেরকে পাসপোর্ট ও পরিচয় জালিয়াতি করে আমিরাতে অনুপ্রবেশের জন্য অভিযুক্ত করে।

এ ধরনের কৌশল মোসাদকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে বিশেষ কোনো মাত্রায় চিহ্নিত করেছে- ব্যাপারটা তেমন নয়। তবে বিস্কুটের কৌটায় হাত আটকে গিয়ে ধরা পড়ার মতো বিষয় ছিল সেটি। এ কারণে ইসরায়েলকে বছরের পর বছর কূটনৈতিক শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে।

লেবানিজ কানাডিয়ান ব্যাংকে ভুয়া ব্যাংক নিরীক্ষক মুনির জির মতো ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের কথা ফাঁস করা হয়েছে নিতসানা দরশন-লিটনার ও স্যামুয়েল কাটজের ‘হারপুন: ইনসাইড দ্য কোভার্ট ওয়ার এগেইন্সট টেররিজমস মানি মাস্টার্স’ নামের বইয়ে।

অর্থ সন্ত্রাসের বিপক্ষে ইসরায়েলের যুদ্ধকে মদদ জোগানো গোয়েন্দা সাফল্য মোসাদ বিনামূল্যে পায়নি। ২০০৯ সালে মুনির জিকে আটকের পর হত্যা করে হেজবুল্লাহ।

গোয়েন্দা অভিযানগুলোতে খুব কম সময়ই আছে যখন ঝুঁকি ছাড়া কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে ও এজেন্টদের নিরাপদ রাখতে সংস্থাগুলোকে জটিল পদক্ষেপ নিতে হয়। একই সঙ্গে তাদের সাফল্য অর্জনের জন্য আরও চাপ দেয়া হয়।

গত কয়েক বছরে ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের মাধ্যমে হেজবুল্লাহর পরিকল্পনা নস্যাৎ করার কয়েকটি সত্যিকার উদাহরণও আছে। তবে সব ঘটনা সত্যি নয়। ১৯৯৮ সালে জর্ডানে হামাস প্রধান খালেদ মাশালকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা চালায় মোসাদ। মোসাদের বেশ কয়েকজন সদস্য ধরা পড়েন।

জর্ডানের রাজা হুসেনের দাবি করা প্রতিষেধক সরবরাহের পরে ও হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে মোসাদ সদস্যদের মুক্তি দেয়া হয়। মোসাদ আরও দাবি করে তারা বেন বারাককে ১৯৯১ সাইপ্রাসে এক ব্যর্থ মিশনে আটক করেছিল।

অনেক মোসাদ এজেন্ট শুধু অ্যাডভেঞ্চারের লোভে ডাবল এজেন্টের কাজ করেছেন বা সংস্থাকে ভুল তথ্য দিয়েছেন।

১৯৭৩ সালে নরওয়ের লিলেহ্যামারে মোসাদ ভুল ব্যক্তিকে হত্যা করে বড় বিতর্কের জন্ম দেয়। একই বছর মিশর ইসরায়েলকে আক্রমণ করবে না বলে মোসাদের কর্মকর্তারা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আইসিস সম্পর্কে রাশিয়ার কাছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস করার পর, বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি ও আমেরিকান গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দা ক্ষেত্রে সাফল্য ও ব্যর্থতা সব সময় ঘটে। এটি কয়েক বছর পরে জনসাধারণ জানতে পারে।

২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে চীন ও ইরান কমিউনিকেশন কোড ডিকোড করে অসংখ্য সিআইএ এজেন্টকে নিষ্ক্রিয় করেছে। এদের মধ্যে সিআইএর অন্তত একজন এজেন্ট সতীর্থদের তথ্য চীন ও ইরানের কাছে ফাঁস করেছেন।

এর আগে অলড্রিচ আমেস ও রবার্ট হ্যানসেন নামের দুই ডাবল রাশিয়ান এজেন্ট আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য চুরি করেন। আমেস আমেরিকায় কাজ করেছেন ১৯৮০ এর দশকে আর হ্যানসেন গুপ্তচরবৃত্তিতে নিয়োজিত ছিলেন ১৯৭৯ থেকে ২০০১ পর্যন্ত। এ থেকে বোঝা যায় যে ইসরায়েলের শত্রুরাও বেশ কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।

তবে মোসাদ যতই ত্রুটিপূর্ণ হোক না কেন, ইরানে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এটিকেই বিশ্বের শীর্ষ সংস্থা হিসেবে ধরা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বকে ইসরায়েল এতো পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্য দেয় যে, ‘স্টার্ট আপ নেশন’ হিসেবে খ্যাত দেশটি গুপ্তচরবৃত্তির জন্যই পশ্চিমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এ বিভাগের আরো খবর