বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইন্টারনেট সেবায় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব কেমন

  •    
  • ১৯ মার্চ, ২০২২ ১১:০৬

ইন্টারনেট যোগাযোগে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ। এমন অবস্থায় বিকল্প পথ বের করার চেষ্টা করছে রাশিয়া।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণার পর ইউক্রেনে তিন সপ্তাহ ধরে হামলা অব্যাহত রেখেছেন রুশ সেনারা। সে হামলা প্রতিরোধ করছে ইউক্রেন সেনারা; হচ্ছে প্রাণহানি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নানা সম্পদ। প্রযুক্তি খাতেও পড়েছে এ যুদ্ধের প্রভাব।

ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর রাশিয়ার ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ দিতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। বড় বড় প্রযুক্তি সেবা বন্ধ হতে থাকে রাশিয়ায়; কমে আসতে থাকে ইন্টারনেট সেবা।

ইন্টারনেট যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হতে থাকে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশে। এমন বাস্তবতায় বিকল্প পথ বের করার চেষ্টা করছে রাশিয়া।

রাশিয়ার ওপর প্রযুক্তি সেবা সংক্রান্ত নানা খাতের নিষেধাজ্ঞা কী প্রভাব ফেলতে পারে, ইন্টারনেট যোগাযোগের বিকল্পই বা কী, এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড

অ্যাপল ও মাইক্রোসফট রুশদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। বৈশ্বিক ইন্টারনেট ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত লুমেন টেকনোলজিস রাশিয়ায় সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে আরেক শীর্ষ প্রতিষ্ঠান কোজেন্ট কমিউনিকেশন্সও।

আন্তমহাদেশীয় ইন্টারনেট সংযোগে কাজ করা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) প্রতিষ্ঠান দুটি নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়ানোর অজুহাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া টিকটকেও পোস্ট করতে পারছেন না রাশিয়ার নেট ব্যবহারকারীরা।

এমন প্রেক্ষাপটে ফেসবুক এবং টুইটার নিয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে রাশিয়াও। একাধিক রুশ ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনস্টাগ্রামে ঢোকার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।

পুতিনের সরকার দেশে পশ্চিমা মিডিয়া এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোর ওপর এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ক্রেমলিনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, এমন তথ্য প্রচার বন্ধ করতে একটি আইন পাস হয়েছে দেশটিতে। সার্বিক পরিস্থিতিতে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে রাশিয়ার।

ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ অবিশুর প্রকাশ টিআরটিকে বলেন, রাশিয়ায় এই প্ল্যাটফর্ম এবং পরিষেবাগুলো বিধিনিষেধের আওতায় আসায় দেশটি প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ তথ্যের অবাধ প্রবাহ থেকে রুশদের বিচ্ছিন্নই করবে। পুতিনকে এই পদক্ষেপগুলো সাহায্য করলেও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।

রাশিয়ার অনুসন্ধানী সাংবাদিক আন্দ্রেই সোলদাতভ ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ শুরু হওয়ার সপ্তাহখানেক পর একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ইউক্রেন সম্পর্কে লেখার জন্য রুশদের একমাত্র জায়গা হলো ফেসবুক। রাশিয়ায় যা চলছে তা বোঝা যায় ফেসবুকেই।

পশ্চিমা প্রযুক্তি সংস্থা এবং নিজ দেশের কর্তৃপক্ষের দেয়া বিধিনিষেধে রাশিয়ার ইন্টারনেট সেবায় একটা বড় প্রভাব পড়েছে, এমন কথা অবশ্য এখন বলাই যায়, তবে ইউক্রেনের কাছ থেকে আসা বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান বেশ কয়েকটি গ্রুপের প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা পর্যবেক্ষণ করা ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নম্বরসকে (আইসিএএনএন) রাশিয়ার প্রাথমিক ডোমেইনগুলো (ডট আরইউ) প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছিল।

আইএএনএনের প্রধান নির্বাহী গোরান মারবি এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জানান, সংস্থাটি নিরপেক্ষতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া, নিষেধাজ্ঞা জারি করা বা ইন্টারনেটে প্রবেশে সীমাবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত তারা নেবে না। আরও কিছু প্রতিষ্ঠানও এমন কথা জানিয়েছে।

ইন্টারনেট সেবার এমন প্রেক্ষাপটে বিকল্পও বের হয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়ান ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ভিপিএনের মাধ্যমে আটকে যাওয়া সাইটগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই মাধ্যমে ফেসবুক ও টুইটার ডাউনলোড আগের চেয়ে আট গুণ বেড়েছে।

রাশিয়ায় ইন্টারন্টে সেবা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাকে তুলনা করা যেতে পারে ‘সার্বভৌম ইন্টারনেট’-এর সঙ্গে। ইন্টারনেট থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার ধারণাটিকে ‘স্প্লিন্টারনেট’ বলা হয়। এর মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন অংশে বিভক্ত হতে পারে ইন্টারনেট সেবা।

চীনের ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল’ মনিটরিং এবং সেন্সরশিপের মাধ্যমে অনলাইন সেবা নিয়ন্ত্রণ করে। আর অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক অনলাইন সেবা খাতকে ইরান নিয়ন্ত্রণ করে টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির মাধ্যমে।

রাশিয়ার সরকার দীর্ঘদিন ধরে দেশে ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্য দেশের সঙ্গে এই মাধ্যমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টাও চালিয়েছে তারা।

আরইউনেট বা রাশিয়ার মধ্যে ইন্টারনেট সেবা গত কয়েক বছরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বেশ। ২০১৯ সালে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশীয় ইন্টারনেট সেবায় নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পথ সুগম হয় রাশিয়া সরকারের।

অবশ্য ইন্টারনেট সেবা পর্যবেক্ষক অ্যান্ড্রু সুলিভানের মতো অনেকেই রাশিয়ায় আরইউনেট এবং বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে এখনও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

সুলিভান টিআরটিকে বলেন, সরকার যা বলবে, তা সত্ত্বেও রাশিয়ার জন্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কঠিন। এটা স্বীকার করতে হবে যে, যদি আরইউনেট আসে, তবে সেটি সত্যিকার অর্থে রুশ ইন্টারনেট হবে না।

তিনি বলেন, শুধু রাশিয়া নয়, এটি বিশ্বের জন্যও ক্ষতির কারণ হবে।

রাশিয়াকে বিশ্ব ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন করা হোক বা না হোক, এ সম্পর্কে এই যে আলোচনা, এটিও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রযুক্তি কীভাবে বিশ্বকে বিভক্ত করছে, এটি তারই একটি বড় প্রমাণ।

এ বিভাগের আরো খবর