প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণায় ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের শুরু থেকেই একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় পড়ে রাশিয়া। বৈশ্বিক পরাশক্তিকে কাবু করতে তাদের অর্থব্যবস্থা ধসিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ ও সংস্থাগুলো।
সম্মিলিত নিষেধাজ্ঞায় পড়ে রাশিয়ার ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। দেশটি থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয় শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।
রাশিয়াকে চেপে ধরার এ কৌশলের প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ওপর কতটা পড়েছে, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে আল জাজিরা। এতে বলা হয়েছ, মস্কোর ওপর নজিরবিহীন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব টের পেতে শুরু করেছেন রাশিয়ার নাগরিকরা।
পুতিনের ২৪ ফেব্রুয়ারির ঘোষণার পর আর্থিক বিধিনিষেধে ডলারের বিপরীতে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের মানে ব্যাপক অবনমন হয়। একই সঙ্গে আকাশচুম্বী মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি বেকারত্ব বাড়তে থাকে।
গত বুধবার সরকারের মন্ত্রীদের উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে পুতিন জোর দিয়ে বলেন, ‘অর্থনৈতিক ঝটিকা হামলা’ সামলাতে পারবে রাশিয়া, তবে বাস্তবতা বলছে, এ হামলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রুশরা। এর কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো।
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থা রোস্ট্যাট বুধবার জানিয়েছে, গত ৫ থেকে ১১ মার্চ সময়ের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ২.১ শতাংশ, যা ২০ বছরে সাপ্তাহিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১১ মার্চ নাগাদ বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি আগের সপ্তাহে থাকা ১০.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২.৫ শতাংশ।
ব্যবসাকেন্দ্রিক সংবাদপত্র কোমারস্যান্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত খাদ্যের মূল্য বেড়েছে ১০.৪ শতাংশ। এ বৃদ্ধি ১৯৯৮ সালের পর সর্বোচ্চ।
রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সামারার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী ইভান বলেন, যে টুনা মাছ ১৩০ রুবলে কেনা যেত, সেটির দাম এখন ১৬০ থেকে ১৮০ রুবল। তিনি টুইটারে এক পোস্টে জানান, অনেক দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।
গত তিন সপ্তাহে রাশিয়ার মুদ্রার মানের আনুমানিক ২০ শতাংশ অবনমন হয়েছে। এর ফলে খুচরা বিক্রেতারা তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
কোমারস্যান্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধি ও রুবলের পতনে প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল গড়ে তাদের পণ্যের দাম ৪০ শতাংশ বাড়িয়েছে। এমনকি নারীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রীর দাম ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
রাশিয়াভিত্তিক সংবাদ সংস্থা তাসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বর্ধিত খরচের সঙ্গে সংগতি রাখতে খুচরা বিক্রেতারা দুগ্ধজাত পণ্য এবং কিছু সবজির দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়ে রাখছেন।
বর্ধিষ্ণু বেকারত্ব
শুরুতে গড়িমসি করলেও পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ব্যবস্থা সুইফট থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে একমত হয় পশ্চিমা দেশগুলো। এর ফলে ভিসা, মাস্টারকার্ড ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ বা সীমিত করে।
এ ব্যবস্থার সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা যুক্ত হওয়ায় রাশিয়ার অর্থনীতিতে ধস নামতে পারে বলে মত দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ এলিনা রিবাকোভা।
ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ায় কতসংখ্যক মানুষ বেকার হয়েছেন, তা নিয়ে সরকারি কোনো তথ্য প্রকাশ হয়নি, তবে অ্যাপল ও আইকিয়ার মতো বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসা বন্ধ বা গুটিয়ে নেয়ায় বিপুল মানুষ বেকার হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ৮ মার্চ রাশিয়ায় ৮৫০টি রেস্তোরাঁ বন্ধের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফাস্টফুড কোম্পানি ম্যাকডনাল্ড’স। এতে প্রায় ৬২ হাজার মানুষ চাকরি হারান।
রাশিয়ায় আগামী দিনগুলোতে কতসংখ্যক মানুষ বেকার হতে পারেন, তা নিয়ে এক বিশ্লেষক কোমারস্যান্টকে বলেন, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ বেকারত্ব প্রায় ৭ শতাংশ বাড়তে পারে।