ইউক্রেন অভিযানের শাস্তি হিসেবে রাশিয়ার ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। রাশিয়ার আর্থিক খাত, বড় কোম্পানি, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা, রাশিয়ার অভিজাত শ্রেণি ও নর্ড স্ট্রিম টু প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনকে লক্ষ্য করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জবাব হিসেবে পাল্টা কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে রাশিয়া। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকার রাশিয়ায় আরও নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনে সৈন্য না পাঠানোর ঘোষণা দেয়ার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য পদক্ষেপ পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিশোধ নেয়ার প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
বাইডেনের দাবি ছিল, এসব নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে পঙ্গু করে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্ররাও একই পথ অনুসরণ করে ভিন্ন ভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছ। এ কারণে পশ্চিমা দেশে পণ্য সরবরাহ ও লেনদেনে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা এবং কোনো ধরনের বিধিনিষেধ এড়াতে অ্যাপল, বোয়িং এক্সন-মবিল করপোরেশন ও পেপসিকোর মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলো রাশিয়া থেকে পণ্য প্রত্যাহার করেছে বা দেশটিতে তাদের কার্যক্রম কমিয়ে এনেছে।
রাশিয়ার সামরিক অভিযান চলতে থাকায় প্রাথমিকভাবে তালিকা থেকে বাদ পড়া কিছু সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কথাও এখন বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বৈশ্বিক ব্যাঙ্কগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী আর্থিক অবকাঠামো ব্যবস্থা সুইফ্ট থেকে কয়েকটি রাশিয়ান ব্যাঙ্কের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সায় দেয়েছে। তারা রাশিয়ার জ্বালানি খাতের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বড় ব্যাঙ্কগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্তের মতো বিধিনিষেধগুলো এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে এর প্রভাব সরাসরি রাশিয়ার অর্থনীতিতে পড়ে। অন্যান্য বিধিনিষেধ যেমন প্রযুক্তি পণ্যের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, রাশিয়ান শিল্প ও প্রতিরক্ষা খাতকে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ফেলতে পারে।
তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, রাশিয়া তার তেল ও গ্যাস রপ্তানিকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কয়েকজন রুশ কর্মকর্তা এমনটাই আভাস দিয়েছেন। এর ফলে জ্বালানি বাজার ব্যাহত হবে ও ইউরোপসহ অন্য ভোক্তাদের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করবে। তবে এমন পদক্ষেপে রাশিয়ার অর্থনৈতিক দুর্দশাও বাড়বে।
সবশেষ নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধগুলো কী?
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে রাশিয়ার আর্থিক ব্যবস্থা একটি অন্যতম লক্ষ্য। তারা রাশিয়ার জ্বালানি খাতকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। তারা প্রায় সব দেশের জন্য প্রদত্ত অগ্রাধিকারমূলক, কম শুল্ক বাণিজ্যের মর্যাদা অপসারণের দিকেও তাকিয়ে আছে। মিত্রদের মতে এতে ক্রেমলিনের যুদ্ধ করার ক্ষমতা কমবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রিজার্ভের মজুদে ডলার, ইউরো ও অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করতে বাধা দিয়েছে। এটি রুবেলকে স্থিতিশীল করার ও মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। রাশিয়ার সার্বভৌম-সম্পদ তহবিলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে দেশটির বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহের ক্ষমতাকে সীমিত করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, যুক্তরাজ্য ও কানাডা কয়েকটি রাশিয়ান ব্যাংককে সুইফ্ট নেটওয়ার্ক থেকে সরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর বিশ্বব্যাপী পরিচালনার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
এসবারব্যাংক ও ভিটিবিকে কালো তালিকাভুক্ত
বাইডেন প্রশাসন আমেরিকান নাগরিক ও সংস্থাগুলোকে রাশিয়ার সঙ্গে ঋণের লেনদেন করা থেকেও নিষেধ করেছে। এর মাধ্যমে ক্রেমলিনের মূল তহবিলের উত্স বন্ধ করা হয়েছে।
আমেরিকার ইউরোপীয় মিত্ররাও একই পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে থেকে রাশিয়ার ৭০ শতাংশ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা বন্ধ করে দিচ্ছে। ইইউ তার ক্রেডিট-রেটিং সংস্থাগুলোর মাধ্যমে রাশিয়া ও রাশিয়ান সংস্থাগুলির রেটিং ও রাশিয়ান ক্লায়েন্টদের রেটিং পরিসেবাও নিষিদ্ধ করছে৷ যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, তারা রাশিয়ান সরকার ও এর কয়েকটি বড় রাষ্ট্রীয় কোম্পানিকে ঋণ নিতে বাধা দেয়ার আইন পাস করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বিভিন্ন দেশ রাশিয়ায় প্রযুক্তির রপ্তানি সীমিত করেছে। রাশিয়ার মিত্র বেলারুশের কাছেও প্রযুক্তি রপ্তানি করছে না যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা, মহাকাশ ও সামুদ্রিক শিল্পকে টার্গেট করেছে। বিধিনিষেধগুলো সেমিকন্ডাক্টর, কম্পিউটার, টেলিযোগাযোগ, তথ্য-নিরাপত্তা সরঞ্জাম, লেজার ও সেন্সরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এই বিধিনিষেধের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে উত্পাদিত পণ্যের পাশাপাশি আমেরিকান সরঞ্জাম, সফ্টওয়্যার ও ব্লুপ্রিন্ট ব্যবহার করে তৈরি বিদেশি পণ্যগুলোও অন্তর্ভুক্ত। একই কৌশল চীনা টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কিং সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল।
ইইউ রাশিয়ার কাছে বিমান ও খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রি নিষিদ্ধ করছে। একইসঙ্গে জ্বালানি খাতের কিছু পণ্য বিক্রিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমেরিকান কর্মকর্তাদের দাবি, এতে করে রাশিয়ার জন্য তেল শোধনাগারগুলোর আধুনিকায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল ও গ্যাস শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় নিষ্কাশন সরঞ্জাম বিক্রি সীমিত করেছে।
ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিক্রিয়া
আমেরিকান ও ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞার পরও ভাবলেশহীন পুতিন। একাধিক ফ্রন্টে তিনি ইউক্রেনে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউক্রেনীয়দের মনোবল ধ্বংস করার জন্য আবাসিক ও অন্যান্য বেসামরিক এলাকায় আঘাত করছেন।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ ঘোষণা করার সময় পুতিন অন্যদের হস্তক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বাইডেন, সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন, সিআইএ ডিরেক্টর উইলিয়াম বার্নস ও প্রশাসনের অন্যদের সঙ্গে সাবেক সেক্রেটারি অফ স্টেট হিলারি ক্লিনটন ও বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
রাশিয়া জ্বালানি ও অন্য সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী। গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪০ শতাংশ জোগান দিয়েছিল তারা। পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটি উদ্বেগ হলো, রাশিয়া এই সরবরাহ বন্ধ করতে বা কমাতে পারে। আর তেমনটি ঘটলে শুধু ইউরোপের ভোক্তা নয়, বিশ্ববাজার জুড়ে ধাক্কা অনুভূত হবে।
বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ার তেল, নির্দিষ্ট পেট্রোলিয়াম পণ্য, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। আমেরিকার তেল ও পরিশোধিত পণ্যের প্রায় ৮ শতাংশ রাশিয়া থেকে আসে। ইইউ রাশিয়ার জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছে এবং এই বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি দুই-তৃতীয়াংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্য বলেছে, বছরের শেষ নাগাদ তারা রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করবে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত গ্যাসের ৮ শতাংশ রাশিয়ার।
জ্বালানি ছাড়াও ইইউ রাশিয়ায় উচ্চ মূল্যের বিলাসবহুল পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করছে এবং রাশিয়ার স্টিল আমদানি নিষিদ্ধ করছে। বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ান সি-ফুড, ভদকা ও হীরা আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। রাশিয়ান পণ্যে কম শুল্ক সুবিধা বাতিলের জন্য বেশিরভাগ দেশ ও কংগ্রেসের সম্মতি প্রয়োজন।
সম্মিলিতভাবে গ্রুপ অফ সেভেনের নেতারাও মূল রাশিয়ান পণ্যের জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য মর্যাদা বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জি সেভেন নেতারা আরও বলেছেন, তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অন্য সদস্যদেরও একই কাজ করার আহ্বান জানাবেন। জি সেভেন আরও বলেছে, তারা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ শীর্ষস্থানীয় বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে রাশিয়ায় যেন অর্থায়ন না হয় সে লক্ষ্য কাজ করছে।
২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চলকে সংযুক্ত করে নেয় এবং দেশের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহকে উসকে দেয়। সেবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর, মস্কো তার অর্থনীতিকে নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
রাশিয়া ডলার থেকে নিজেকে মুক্ত করেছে ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা ঋণের অংশ কমিয়ে এনেছে। সরকার একটি রক্ষণশীল রাজস্ব নীতি পরিচালনা করেছে। আইএমএফের তথ্য অনুসারে, সরকারি ঋণ জিডিপির ২০ শতাংশের নিচে রেখেছে তারা, যা যুক্তরাষ্ট্রে ১৩৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তথ্য অনুসারে, এটি একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সোনার হোল্ডিং ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ আন্তর্জাতিক রিজার্ভ। ডিসেম্বরে যার মূল্য ৬৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও রাশিয়ার জন্য সর্বোচ্চ।
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কী হতে পারে?
বাইডেন প্রশাসনের মতে, নিষেধাজ্ঞাগুলো রুবলকে দুর্বল করা, রাশিয়ার স্টক মার্কেটকে বিপর্যস্ত করা ও ধীরে ধীরে রাশিয়ান অর্থনীতি, যা মূলত জ্বালানি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল, সেটি ধ্বংস করার জন্য করা হয়েছে।
পশ্চিমা মিত্ররা তার আর্থিক ব্যবস্থা ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের রিজার্ভের বিরুদ্ধে চলে যাওয়ায় রাশিয়া তার স্টক মার্কেট বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে তারা প্রত্যাশিত দরপতন বন্ধ করতে পেরেছে। রুবলকে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে মূলধন নিয়ন্ত্রণে থাকার পরেও মুদ্রাটি এ বছর ডলারের বিপরীতে তার মূল্যের প্রায় এক তৃতীয়াংশ হারিয়ে সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে রুশ অভিজাত শ্রেণির সদস্যরা। এর মধ্যে আছেন পুতিনের কাছের অন্যতম ব্যক্তিবর্গ- যেমন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং পুতিন নিজে। ইইউ পুতিন ও ল্যাভরভের ব্লকে থাকা যেকোনো সম্পদ বাজেয়াপ্ত করছে। তবে কূটনীতির উপায় খোলা রাখার জন্য তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে না।
হোয়াইট হাউসের ঘোষণা দেয়া পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে পুতিনের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও তার সম্পদ জব্দ করা। সাবেক কর্মকর্তাদের মতে, বিশ্ব মঞ্চে পুতিনকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। রাশিয়ার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুতিনের সম্পদ মূলত সহযোগীদের নামে রাখা হয়েছে, যে কারণে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়ছে না।
আমেরিকার বিচার বিভাগ বিশ্বজুড়ে লুকিয়ে রাখা রাশিয়ান অলিগার্কদের বিলাসবহুল রিয়েল এস্টেট, ব্যক্তিগত জেট, ইয়ট ও অন্য সম্পদ খুঁজে বের করতে ও বাজেয়াপ্ত করার জন্য একটি টাস্কফোর্স চালু করেছে।
ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা রাশিয়ান তেল উৎপাদনকারী রোসনেফ্টের প্রধান নির্বাহী ইগর সেচিনের মালিকানাধীন একটি ইয়ট আটক করেছে। এরপর যুক্তরাজ্য সেচিনের সম্পদ জব্দ করে তার উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র অতীতে রাশিয়ান অলিগার্কদের কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এবার ইউক্রেন সংকটের সময় তাদের আত্মীয়দেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রাশিয়ার ধনীদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান যুক্তরাজ্য এক হাজার জনের বেশি রুশ টাইকুন ও সহায়ক সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। যুক্তরাজ্য আরও বলেছে, তারা রাশিয়ান নাগরিকদের ব্যাংকগুলোতে জমা হতে পারে এমন তহবিল ৫০ হাজার পাউন্ডে সীমাবদ্ধ করবে। তারা রাশিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন অ্যারোফ্লোটের বিমান ব্রিটেনের বিমানবন্দরে নিষিদ্ধ করেছে। এর মধ্যে হিথ্রোর মতো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও অন্তর্ভুক্ত।
রাশিয়ার ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ, ইংল্যান্ডের ফুটবল ক্লাব চেলসি এফসির আগের দফায় নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষা পেলেও যুদ্ধ শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে তা পালটে গেছে। বৃটিশ সরকার আব্রামোভিচের ইংল্যান্ডে অবস্থিত সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে ও তাকে ইংল্যান্ড ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ক্রেমলিনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান করেকজন বৃটিশ মন্ত্রী। আব্রামোভিচ তার আগে জানান যে, চেলসি ক্লাব বিক্রি করবেন। নিষেধাজ্ঞার অধীনে যে কোনো বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বৃটিশ সরকার বলেছে যে এটি চেলসিকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বিশেষ লাইসেন্স দেবে।
রাশিয়া কি আগে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ রুশ সরকার ও এর সহযোগীদের উপর আগেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। রাশিয়ান ভাড়াটে সৈন্য সংস্থা ওয়াগনার গ্রুপ এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ও পুতিনের ঘনিষ্ঠ ইয়েভগেনি প্রিগোজিনকেও কালো তালিকাভুক্ত করেছে।
২০১৪ সালে দখলদারিত্ব ও ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করার পর ৮ শিল্পোন্নত দেশের গ্রুপ থেকে রাশিয়াকে সরিয়ে দেয়া হয়। গ্রুপটি এরপর থেকে গ্রুপ অফ সেভেন নামে পরিচিত।
ট্রাম্প প্রশাসনের সময়, যুক্তরাষ্ট্র নর্ড স্ট্রিম টু নির্মাণে কাজ করা সংস্থাগুলোর অনুমোদন দিয়েছিল। এটি জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহনকারী রাশিয়ার একটি বিশেষ পাইপলাইন, যাকে রাশিয়া যেকোনো সময় ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে আমেরিকান কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক বার্তা দিয়ে এসেছেন।
২০২১ সালের মে মাসে বাইডেন প্রশাসন প্রকল্প পরিচালনাকারী মূল সুইস প্রতিষ্ঠান নর্ড স্ট্রিম টু এজি ও এর প্রধান নির্বাহীকে বিধিনিষেধ দিতে চেয়েছিল। তবে বার্লিনের প্রতি সহায়তা হিসেবে আভাস হিসেবে তেমনটি আর করা হয়নি।
দুটি রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়ে পুতিনের ঘোষণার পর বাইডেন প্রশাসন নর্ড স্ট্রিম টু-এর জন্য নিষেধাজ্ঞাগুলো ফের আরোপ করেছে। জার্মানি প্রকল্পটি স্থগিত করার কথা বলার পরে এ নির্দেশনা আসে।
এক সুইস কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, এরপরই নর্ড স্ট্রিম টু এজি তার ১০০ জনের বেশি কর্মী ছাঁটাই করে এবং এর কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়।