রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সংবাদ প্রচারকালে যুদ্ধবিরোধী ব্যানার নিয়ে সংবাদ উপস্থাপিকার পেছনে দাঁড়ানো সেই সাংবাদিককে মস্কোর আদালতে নেয়া হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত চ্যানেল ওয়ানের এডিটর মারিনা ওভস্যানিকোভা সোমবার রাতে যুদ্ধবিরোধী পোস্টার নিয়ে টিভি সেটে হাজির হন। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে মারিনার আইনজীবী জানিয়েছিলেন, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মারিনার বিরুদ্ধে অনুমোদনহীন আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ অভিযোগে তার জরিমানা অথবা ১০ দিনের জেল হতে পারে।
তবে রাশিয়ায় নতুন আইনে তার বিচার করা হতে পারে বলেও শঙ্কা করা হচ্ছে। এই আইনে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অভিযানকে ‘আগ্রাসন’ বলা বা সংঘাত নিয়ে ‘ভুয়া তথ্য’ ছড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওই আইনে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে মারিনার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে মস্কো আদালতে তার আইনজীবীর সঙ্গে তাকে দেখা গেছে।
টেলিভিশনে মারিনার হাতে ধরা ব্যানারটিতে লেখা ছিল, ‘কোনো যুদ্ধ নয়। যুদ্ধ বন্ধ করুন। অপপ্রচারে বিশ্বাস করবেন না। তারা আপনাকে মিথ্যা বলছে।’
এ সময় তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন।’
তবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চ্যানেলটি তাদের স্ক্রিন পরিবর্তন করে ফেলে।
এ ঘটনার ভিডিও পরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
টেলিভিশন চ্যানেলে ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হওয়ার আগে তিনি একটি ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন যাতে তিনি ইউক্রেনে রুশ হামলাকে ‘অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন।
ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘ক্রেমলিনের প্রচারণার জন্য তাদের হয়ে কাজ করায় আমি লজ্জিত।’
তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজেকে টেলিভিশনের পর্দায় মিথ্যা বলার অনুমতি দিয়েছিলাম বলে লজ্জিত। রাশিয়ানদের জম্বিতে পরিণত হতে দিয়েছিলাম বলে লজ্জিত। আমরা শুধু নীরবে এই অমানবিক শোষণ দেখেছি।’
মারিনার বাবা ইউক্রেনীয় ছিলেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
রাশিয়ার জনগণকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ভয় পাবেন না, তারা আমাদের সবাইকে বন্দি করতে পারবে না।’
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি এই রুশ সাংবাদিককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি ভিডিও ভাষণে বলেছেন, ‘আমি সেই রুশদের প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা সত্য প্রকাশের চেষ্টা বন্ধ করে না। যারা ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং সত্য বলে।’
রাশিয়ায় বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সে নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ ঘটনার ভিডিও অনলাইনে শেয়ার দিয়েছেন। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘বাহ, মেয়েটি দুর্দান্ত।’
এদিকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ অভিযান। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ, খারকিভ, মারিওপোল, সুমিসহ প্রধান শহরগুলোতে লড়াই চলছে।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।