২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মাস কয়েক আগেই প্রচারে নেমেছিলেন প্রিয়াংকা গান্ধী। যোগী রাজ্যের রাজপথে শোভাযাত্রা করে প্রিয়াংকাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল ন্যাশনাল কংগ্রেস।
দলের কর্মীরা ভেবেছিলেন, নতুন মুখ, নতুন চমক মরা গাঙে বান আনতে পারে। তবে গোটা রাজ্যে নয়, কেবল পূর্ব অংশের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাকে। কংগ্রেসকর্মীরা অনেকেই তখন নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
কিন্তু ভোটের ফলে এর প্রভাব দেখা যায়নি। উত্তর প্রদেশে বিধানসভার ৪০৩ আসনের মধ্যে মাত্র দুটি আসনে জয় পেয়েছিল কংগ্রেস।
এবারের নির্বাচনের আগে উত্তর প্রদেশে ২০৯টি সভা ও রোড শো করেছেন প্রিয়াংকা। যেখানে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ২০৩টি নির্বাচনি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এত কিছুর পরও শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের ডুবন্ত তরী আরও ডুবে গেল উত্তর প্রদেশে।
উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে প্রিয়াংকা গান্ধী যে সক্রিয়তা দেখিয়েছেন, তাতে অনেকেই মনে করেছিলেন পদ্মা শিবিরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পুরোপুরি প্রস্তুত কংগ্রেস। নারী ভোটারদের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে হাতিয়ার করেছিলেন, ভিড়ও টেনেছিলেন। তবে সেই ভিড় শেষ পর্যন্ত ইভিএম পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারেননি প্রিয়াংকা।
কংগ্রেসের অন্দরে রাহুল গান্ধীর ভূমিকা নিয়ে এর আগে বিরোধী শিবির থেকে নানা কটাক্ষ এসেছে। এবার প্রিয়াংকা গান্ধীর জন্যও তেমন কিছু হবে না তো? এমন প্রশ্ন ইতোমধ্যেই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, গান্ধী পরিবারের ব্র্যান্ড ভ্যালু তলানিতে ঠেকেছে উত্তর প্রদেশে। আর এই ভরাডুবির জন্য তারা দায়ী করছেন প্রিয়াংকাকে।
প্রিয়াংকা গান্ধী যখন রাজনীতির দুনিয়ায় সক্রিয়ভাবে পা রাখেন এবং উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব নেন, তখন গান্ধী পরিবারের দুর্গ অমেঠি ও রায়বেরেলি থেকে কংগ্রেসের দুজন সাংসদ এবং দুজন বিধায়ক ছিলেন। সোনিয়াকন্যার উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব নেয়ার তিন বছরে এখন কংগ্রেসের সাংসদ একজন- প্রিয়াংকা গান্ধী।
উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের এই ভরাডুবি আজকের নয়। অতীতের নির্বাচনি পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের পায়ের তলার মাটি আলাদা হয়ে গেছে।
কংগ্রেসের ভোটব্যাংকে ধস নামার শুরুটা ১৯৮৫ সালে। তখন থেকেই গেরুয়া শিবিরের শক্তি বাড়তে শুরু করেছিল।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসকে ছাপিয়ে উত্তর প্রদেশের ক্ষমতায় আসে বিজেপি। মাঝে অবশ্য বহুজন সমাজ পার্টি, সমাজবাদী পার্টির মতো আঞ্চলিক দলগুলোও দাপট দেখিয়েছে।
২০০২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৪০৩ আসনের মধ্যে ২৫ আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। ২০০৭ সালে তা আরও কমে ২২ আসন হয়েছিল।
সোনিয়া গান্ধী দায়িত্ব নেয়ার পর নিজের আসন রায়বেরেলি ধরে রাখতে পারলেও উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের ফলে সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেননি।
মাঝে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বেও উত্তর প্রদেশে খুব একটা ভালো ফল করতে পারেনি কংগ্রেস শিবির। ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসকে ভোট বৈতরণী পার করানোর দায়িত্বে ছিলেন রাহুল।
প্রায় দুই মাস ধরে অন্তত ২০০ সভা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ভোটে ৩৫৫ আসনের মাত্র ২৮টিতে জয় পেয়েছিল কংগ্রেস। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল, যে আসনের বিপরীতে সবার শেষে ছিল কংগ্রেস।