রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেন রুশ সেনারা। সে অভিযানের ১৪তম দিনেও দুই পক্ষের যুদ্ধ বন্ধের স্পষ্ট আলামত দেখা যায়নি। এমন বাস্তবতায় তুরস্কে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ইউক্রেন-রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে নজর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুত সাবুসোলুর নিমন্ত্রণে আয়োজন হতে যাওয়া এ বৈঠকে যুদ্ধ বন্ধের পথ মিলবে কি না, সে প্রশ্ন অনেকের।
বৈঠকের বিষয়ে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহর প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ আনতলিয়ায় উচ্চ পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
রাশিয়ার ও ইউক্রেন উভয় দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে তুরস্কের। গত সোমবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাবুসোলু রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবার মধ্যে বৈঠকের ঘোষণা দেন।
সে বৈঠকের বিষয়ে সাবুসোলু বলেন, ‘আনতালিয়ায় ১০ মার্চ, বৃহস্পতিবার আমরা ত্রিপক্ষীয় ফরম্যাটে এ বৈঠক করব।’
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীই বৈঠকে তার উপস্থিতি চেয়েছেন। এ কারণে তিনি এতে যুক্ত হবেন।
তিনি আরও বলেন, এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে প্রথমবার মুখোমুখি হবেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
অবকাশযাপনের জন্য বিখ্যাত তুরস্কের শহরটিতে আনতালিয়া ডিপ্লোম্যাসি ফোরামের তিন দিনের বৈঠক শুরু হতে যাচ্ছে শুক্রবার। এর আগের দিন বসবেন ইউক্রেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়।
এ বৈঠককে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ ও ‘গুরুত্বপূর্ণ ধাপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাবুসোলু। তিনি বলেন, দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে আঙ্কারা।
বৈঠকের আগের দিন বুধবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘আমি আশা করি আগামীকাল রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রথম বৈঠক স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করবে।’
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুলেবা বলেন, সাবুসোলুর প্রচেষ্টায় সে বৈঠক হতে যাচ্ছে। টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘১০ মার্চ অনুষ্ঠেয় বৈঠকটি মূলত তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুত সাবুসোলুর সুবাদে হতে যাচ্ছে।
‘আমি জানি না এরদোয়ান পুতিনকে কিংবা সাবুসোলু ল্যাভরভকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন কি না, তবে বৈঠক হবে।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ গত দুই বছর ধরে দ্বৈত বা চার পক্ষের বৈঠকে এড়িয়ে চলছেন মন্তব্য করে কুলেবা বলেন, ‘এখন হঠাৎ করে তিনি রাজি হলেন। সম্ভবত তিনি কোনো বার্তা দিতে চান।
‘আমরা শুনব, তবে তার সঙ্গে আমি এটা মাথায় রেখে কথা বলব যে, ল্যাভরভ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের অন্যতম পরিকল্পনাকারী।’
আলোচনায় ক্রিমিয়া কিংবা দোনবাস অঞ্চল থাকবে কি না, জানতে চাইলে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সমঝোতা আলোচনায় কোনো কিছু ছেড়ে দেয়ার অবস্থানে নেই তার দেশ।
এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, বৈঠকে যোগ দিতে বুধবারই তুরস্কে যাবেন সের্গেই ল্যাভরভ।