ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে থাকা রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধের বিষয়ে আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। বাকি ছিল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। সেটিও হয়ে গেছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে দেয়া ভাষণে রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তিনি বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতির মূল শক্তির ওপর আঘাত হানার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বাইডেন আরও বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার তেল, গ্যাস, জ্বালানিসহ সব ধরনের আমদানি নিষিদ্ধ করছি। তার মানে আমেরিকার বন্দরে রাশিয়ার তেল আর গ্রহণযোগ্য হবে না। যুদ্ধবাজ পুতিনের বিরুদ্ধে আমেরিকার পক্ষ থেকে এটি বড় ধাক্কা।’
রাশিয়ার জন্য বিকল্প কী জানতে চাইলে শামসুল আলম বলেন, এশিয়ার জ্বালানি বাজার ক্রমেই বড় হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে চীনসহ এশিয়ার বাজার ধরার চেষ্টা করবে রাশিয়া।যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তে রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর কী প্রভাব পড়বে, সেটি জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলমের সঙ্গে।
বর্তমানে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা শামসুল আলম বলেন, তেল আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে বড় বাজার হারাচ্ছে রাশিয়া। এর ফলে ছাড় দিয়ে অন্য দেশে তেল বিক্রির চেষ্টা করবে দেশটি। এতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে পারে।
রাশিয়ার জন্য বিকল্প কী জানতে চাইলে এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, এশিয়ার জ্বালানি বাজার ক্রমেই বড় হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে চীনসহ এশিয়ার বাজার ধরার চেষ্টা করবে রাশিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর কেমন প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি রাশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ। তাদের সেটি মোকাবিলা করতে হবে।
কী প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর
রাশিয়ার তেল ও গ্যাস আমদানি নিষিদ্ধ করায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুৎনিক। এতে বিশেষজ্ঞ মতের পাশাপাশি আমেরিকান সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ বিজনেসের প্রধান এবং ফাইন্যান্সের অধ্যাপক নাফিস আলম স্পুৎনিককে বলেন, ‘রাশিয়ার তেল আমদানি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য দুঃস্বপ্ন হবে। এর ফলে তেলের দাম আকাশচুম্বী হবে।’
তিনি বলেন, ‘সম্মিলিতভাবে অশোধিতসহ অন্য তেলের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। দেশটি দৈনিক প্রায় ৭০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করে, যা বৈশ্বিক সরবরাহের ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
‘উপরন্তু রাশিয়ার জ্বালানির ওপর যেকোনো নিষেধাজ্ঞা কাজে আসবে না। কারণ নিষেধাজ্ঞার ফলে তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ায় রাশিয়ার তেল কোম্পানিগুলোর বেশি লাভ হবে, যা দিয়ে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে আরও বেশি অর্থ মিলবে।’
রাশিয়ার তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত ৪ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিএনএন। এতে বলা হয়, রাশিয়ার অশোধিত তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে খুব সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস পাম্পগুলোর ওপর নাটকীয় প্রভাব পড়বে না।
ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোর মতো রাশিয়ার তেলের ওপর এত বেশি নির্ভরশীল নয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়া থেকে দৈনিক ৯০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পক্ষান্তরে এ সময়ে ইরাক থেকে দিনে ২ লাখ ২৩ হাজার, সৌদি আরব থেকে ৪ লাখ ৭২ হাজার এবং মেক্সিকো থেকে ৪ লাখ ৯২ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করে আমেরিকা।
একই সময়ে প্রতিবেশী দেশ কানাডা থেকে রোজ ৪১ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র।
দ্য হিলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার তেলে আমদানি নিষেধাজ্ঞার আগেই ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি গ্যালন গ্যাস বিক্রি হয়েছে ৪ দশমিক ১০৪ ডলারে, যেটি ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ। সে বছর প্রতি গ্যালন গ্যাস বিক্রি হয়েছিল ৪ দশমিক ১০৩ ডলারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৭ মার্চ ব্রেন্ট ও ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম বেড়ে ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। ব্রেন্টের দাম ব্যারেলে ৫ দশমিক ১ ডলার বেড়ে হয় ১২৩ দশমিক ২১ ডলার। অন্যদিকে ব্যারেলে ডব্লিউটিআইয়ের দাম ৩ দশমিক ৭২ ডলার বেড়ে হয় ১১৯ দশমিক ৪ ডলার।
৮ মার্চও তেলের দামে উল্লম্ফন দেখা যায়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওই দিন বৈশ্বিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম ব্যারেলে প্রায় ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১২৯ ডলারে। অন্যদিকে ডব্লিউটিআইয়ের দাম বেড়ে হয় ১২৩ দশমিক ৫০ ডলার।